অটো স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষ, নিহত ২

নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় আধিপত্য ও অটো স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কয়েক ঘণ্টার দ্বন্দ্বে দুই জন নিহত, উত্তেজনা বিরাজ করছে

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় অটো স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণের সমস্যা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুইজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২১ জুন) রাতে বন্দর রেললাইন ও শাহী মসজিদ এলাকার ঘটনা এসব তথ্য দিয়েছে জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।

নিহতরা হলেন —
১. বন্দর উপজেলার হাফেজীবাগ এলাকার প্রয়াত সাদেক আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস (৫৫), পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি।
২. পাশের শাহী মসজিদ এলাকার প্রয়াত আব্দুল জলিল মুন্সির ছেলে মেহেদী হাসান (৪২), বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড থেকে চাঁদাবাজি নিয়ে কয়েক মাস ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এতে লিপ্ত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির বহিষ্কৃত সদস্য হান্নান সরকার ও তার শাখাদলীয় কিছু নেতা। ভগ্নীর নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের রনি ও জাফর; অপর পাশে ছিলেন মেহেদী হাসান, বাবু সিকদার, জুয়ারি বাবু ও শ্যামল।

কিছুদিন আগে চুরির টিন বিক্রি নিয়ে তর্ক হয়, গত শুক্রবার ও শনিবারও সংঘর্ষে ছয়–সাতজন আহত হন। শনিবার বিকেলে উভয় পক্ষ শাহী মসজিদ, বন্দর রেললাইন ও হাফেজীবাগে অস্ত্রধারণ করে মহড়া দেয়। রাতে রেললাইনের কাছে আব্দুল কুদ্দুসকে সড়কের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার ছেলেপারভেজ ছিল জাফর–রনি গ্রুপের সদস্য।

পুত্র পারভেজকে খুঁজতে না পেয়ে হামলাকারীরা কুদ্দুসকে ছুরিকাঘাত করে বলে দুদু মিয়া জানায়:

“বড়ভাই চায়ের দোকানে ছিলেন। তাকে ডেকে নিয়ে পারভেজের কথা জানতে চাইতে গেলে তারা ছুরি দিয়ে আঘাত করে। বারবার বলেছে ‘আমায় মারা নয়’, তবু তারা থামেনি।”

এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। রাত সাড়া ১১টার দিকে রনি–জাফর গ্রুপ মেহেদী হাসানকে ধরে নিয়ে স্থানীয় ক্লাবের সামনে মারধর করে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার দুলাভাই মাহফুজুল হক সৌরভ বলেন,

“ও বাড়ি থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে ছিল। মার্ডারের পর রাস্তায় পেয়ে সিরাজউদ্দোল্লা ক্লাবে নিয়ে যায়, বুকে ও মুখে প্রচণ্ড আঘাত দেয়।”

শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত বন্দর এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। রেললাইন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার পর সকালে জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হান্নান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি প্রতিকার দিতে সাড়া দেননি।

জাফর বলেন,

“আমি বিএনপির কর্মী। বাবু–মেহেদী গ্রুপ এলাকায় মাদক ও চাঁদাবাজি করে। আমি প্রতিবাদ করায় হান্নান সরকারের নির্দেশে তারা আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় পারভেজের বাবাকে হত্যা করেছে।”

জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানান,

“দুই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। র‍্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে তিনজন আটক করা হয়েছে। স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার ও ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
তিনি বলেন, পৃথক হত্যা মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

অন্যান্য পত্রিকার হেডলাইন

ইত্তেফাক (The Daily Ittefaq):

অটো স্ট্যান্ড দখল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, নিহত ২

প্রথম আলো:

নারায়ণগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে দুজন খুন

যুগান্তর:

বিএনপির দুপক্ষের দ্বন্দ্বে এক রাতে ২ খুন

এনটিভি অনলাইন (NTV Online):

নারায়ণগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *