
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
৫৩ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি নারী, উম্মে মোহাম্মদ, বর্তমানে বাস করছেন একটি নরদমার পাশেই। প্রতিদিনের কাজের জন্য তাকে ব্যবহার করতে হচ্ছে দূষিত ও পচা পানি। এক সময় তার একটি বাসা ছিল, ছিল সুরক্ষিত পরিবেশ। কিন্তু এখন তিনি গৃহহীন, বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে একটিমাত্র তাবুতে। তার জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো সারছেন সেই দুর্গন্ধযুক্ত পানিতেই।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে তার একমাত্র মানসিক ভরসা—পরিবারের কিছু সদস্য এখনও জীবিত রয়েছেন। এমন বাস্তবতায় আরও কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে একই এলাকায়, যেটি দুর্গন্ধ, জীবাণু আর অসহনীয় পরিবেশে পরিপূর্ণ।
শুধু মানুষই নয়, চারপাশে দেখা মিলছে মশা, পোকামাকড়, ইঁদুর, বেজি আর কুকুরের মতো বিভিন্ন জীবজন্তুরও। পুরো পৃথিবীতে একটু ঠাঁই পেলেও জীবন যেন এখনও নিরাপদ নয়, কারণ রাত নামলেই শুরু হয় বোমাবর্ষণ। উম্মে মোহাম্মদের মতে, এই বাস্তবতা হোয়াইট হাউস কিংবা সৌদি রাজপ্রাসাদের কোনো প্রাসাদ থেকে অনুভব করা সম্ভব নয়।
উম্মে মোহাম্মদের পরিবার আগে গাজার বেইত হানুন এলাকায় থাকত। ইসরাইলি হামলার ফলে তারা একটি ক্যাম্পে চলে যান। কিন্তু রমজান মাস শেষ হওয়ার পর সেখান থেকেও তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আশ্রয়ের আর কোনো জায়গা না পেয়ে তাদের ঠাঁই হয়েছে এই নরদমার ধারেই।
ইসরাইলি বাহিনী নিয়মিত লিফলেট ছড়িয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু উম্মে মোহাম্মদের প্রশ্ন—সে নিরাপদ জায়গা কোথায়? তিনি বলেন, “সারারাত আমাদের এলাকায় বোমা ফেলা হয়। শেখ রাদোয়ান এলাকা ছাড়তে বলা হয়, কিন্তু আমরা যাব কোথায়?”
তার পরিবারের মধ্যে সাত-আটজন শিশু রয়েছে, যাদের মধ্যে নাতি-নাতনিও আছে। তারা যেন দুর্ঘটনাক্রমে নরদমায় পড়ে না যায়—এ চিন্তায় সবাইকে চোখে চোখে রাখতে হয়। একবার একটি কুকুর তাদের তাবুতে ঢুকে পড়েছিল, প্রতিবেশীদের চিৎকারে তারা রক্ষা পান।
এই নোংরা ও ঘিঞ্জি পরিবেশে নানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। আশপাশে পঙ্গপালের মতো পোকা, বড় বড় ব্যাঙের দেখা মেলে। উম্মে মোহাম্মদের ভাষায়, “এই জায়গায় তো গাধাও থাকতে পারবে না। অথচ আমরা মানুষ হয়েও এখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। এটা মানুষের থাকার মতো পরিবেশ নয়।”
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভূমিকা নিয়েও উম্মে মোহাম্মদ হতাশা প্রকাশ করেন। কূটনৈতিক ভাষার ফাঁকফোকর চিহ্নিত করে তিনি বলেন, “আমরা আমেরিকাসহ সব দেশকে বলেছি—তারা যেন এই সংকটের সমাধান করে। প্রতিদিনই তারা বলে, কাল চমক আছে, পরশু যুদ্ধ বন্ধ হবে। কিন্তু সবই মিথ্যা। বাস্তবে আমরা কোনো উদ্যোগ দেখি না।”
জাতিসংঘ এবং ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, গাজায় এখন আর কোনো নিরাপদ জায়গা অবশিষ্ট নেই। লাখ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়ে গেছে। জাতিসংঘ শুক্রবার জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা চলছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৪,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।