
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে কৃষকের অভিযোগ: এনসিপির দুই নেতা চাঁদা দাবি করেছেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বালু সরানোর পরও হয়রানি চলছে।
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের পূর্বহুড়া গ্রামের কৃষক শফিকুর রহমান শিমুল অভিযোগ করেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলা শাখার সদস্য নিহাদ সিদ্দিকী এবং সমন্বয়ক কামরুজ্জামান পিয়াস তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। এই অভিযোগের একটি ভিডিও আমাদের প্রতিনিধির হাতে এসেছে।
নিহাদ সিদ্দিকী, যিনি বুড়িচং উপজেলার ভরাসার গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য, এবং কামরুজ্জামান পিয়াস, বুড়িচং গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে, এই অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমন্বয়ক জানান, তারা প্রশাসনের সাথে ছবি তুলে তা দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে। এই দুইজন একটি সিন্ডিকেটের অংশ।
জানা যায়, ষোলনল ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি সালেহ আহমেদের কাছে দুই পক্ষ সমঝোতার জন্য বৈঠক করেন। প্রথমে ২৫ হাজার টাকা ধার্য করা হয়, কিন্তু শফিকুর রহমান শিমুল ৫ হাজার টাকার বেশি দিতে রাজি হননি। বৈঠকটি হয়েছিল সমন্বয়ক নিহাদ সিদ্দিকীর ভাই কামরুলের ভরাসার বাজারের ওষুধ ফার্মেসিতে।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে সালেহ আহমদ বলেন, “আমার কাছে এসেছিল দুইপক্ষ। আমি তাদের বলেছি, তোমরা তোমাদের মতো সমাধান কর। এই বিষয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না।”
২০২৪ সালের আগস্টের ভয়াবহ বন্যার পর গোমতী নদীর চরে ফসলি জমির ওপর বালুর স্তর পড়ে। কৃষকদের দাবি, এসব বালু না সরালে চরে শাকসবজি উৎপাদন করা যাবে না। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বালু সরানোর উদ্যোগ নেয় কৃষকরা। তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সনিয়া হক জানান, কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
কৃষক শফিকুর রহমান শিমুল জানান, “২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় কৃষি জমির ওপর বালুর স্তর পড়ে। এগুলো সরানোর জন্য আমরা বুড়িচং উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করি। উনারা আমাদের বালু সরানোর অনুমতি দিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “কৃষি জমিকে চাষের উপযোগী করার জন্য বালুগুলো সরানোর জন্য প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ বালু কাটা হচ্ছে। বুড়িচং উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নিহাদ আমাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে। সে কিছু দিন আগে বালু সরানোর শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে। তার সাথে আরেক সমন্বয়ক কামরুজ্জামানও এসেছিল। বুড়িচং উপজেলার আরও কয়েকজন এটার সাথে জড়িত। প্রতিনিয়তই তারা আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করছে।”
তিনি জানান, “কৃষক তাদের চাঁদা দিবে নাকি ফসল করবে, এটাই বুঝতে পারছি না। কৃষি জমির বালু কেটে আমরা একটি স্থানে রাখছি। তারা বলছে, তাদের চাঁদা দিতে হবে। সমন্বয়ক নিহাদ বলেছেন, ষোলনল ইউনিয়নের মাটির দায়িত্বে তিনি রয়েছেন।”
চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে সমন্বয়ক নিহাদ সিদ্দিকী বলেন, “আমি মাটি কাটার ইউনিয়নের সমন্বয়ক। বুড়িচং উপজেলা সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার ইউনিয়নভিত্তিক মাটিকাটা কমিটি করে দিয়েছিলেন। ষোলনল ইউনিয়নের প্রধান দায়িত্বে ছিলাম আমি। যারা মাটি কাটতো, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ইউএনও অফিসে তথ্য দিতাম। আমি চাঁদা দাবি করিনি। আমি কেমন ছেলে, এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখবেন।”
ট্রাকপ্রতি ২০০ টাকা চাঁদা চেয়েছেন—এই বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বুড়িচং উপজেলার সমন্বয়ক কামরুজ্জামান পিয়াস জানান, “সফিকুর রহমান শিমুলের সাথে আমি অন্য একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আমি চাঁদা চাইনি। তারা অবৈধভাবে মাটি কাটছে।”
এই বিষয়ে জানতে এনসিপির বুড়িচং উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী তারেক ইমামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল ধরেননি। সমন্বয়ক চাঁদাবাজি করছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক সাকিব হোসেন বলেন, “এই বিষয়ে আমি অবগত না। শুধু কৃষক নয়, কারো কাছেই চাঁদা চাওয়া উচিত না। বিষয়টি আমি দেখতেছি।”
বুড়িচং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনিয়া হক বলেন, “চরের বালু কাটার জন্য আমরা কাউকে অনুমতি দেইনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড দিয়ে থাকলে এটা উনাদের বিষয়।”
বুড়িচং থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আজিজুল হক বলেন, “এই বিষয়ে আমার কাছে এখনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
অন্য পত্রিকার হেডলাইন:
কৃষকের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি এনসিপির দুই নেতার — বার্তা বাজার