
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
৫৩ হাজার ৫১৮ কনটেইনার ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার ৭০০ কনটেইনার। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কনটেইনার বহু বছর ধরে পড়ে আছে, যেগুলোর বেশিরভাগই পণ্যভর্তি। কাস্টমস বিভাগ ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি হওয়া এবং খালাস না হওয়া মোট সাড়ে পাঁচ হাজার কনটেইনার নিলামে তোলার কাজ শুরু করেছে। এই প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে চলবে।
দীর্ঘ সময় ধরে মামলা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এসব কনটেইনার নিলামে তোলা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর ফলে বন্দরের নিরাপত্তা ও অবকাঠামো কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য চাপ পড়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, বর্তমানে নিলামযোগ্য কনটেইনার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এদের মধ্যে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের রয়েছে ১,৮৩৫টি এবং ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের রয়েছে ৩,৮০৬টি। এ ছাড়া প্রায় ৪০০টির মতো কেমিক্যালবাহী কনটেইনার রয়েছে বিভিন্ন শেড ও ইয়ার্ডে, যেগুলোর অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব কারণে বন্দর এলাকায় একটি গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বন্দর পরিচালনার নীতিমালায় বলা আছে, কার্যক্রম সচল রাখতে অন্তত ৩০ শতাংশ জায়গা ফাঁকা রাখা আবশ্যক। কিন্তু বর্তমানে বন্দরের প্রায় প্রতিটি অংশেই জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে, যা আমদানি-রফতানি কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।
এই প্রেক্ষাপটে ১৪ মে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বন্দরে পণ্যজট কমানো ও খালাস প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে একটি বিশেষ আদেশ জারি করেছে। ১৫ মে এ তথ্য জানান এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল আমিন।
আদেশে বলা হয়, দ্রুত খালাস, খরচ ও সময় সাশ্রয়, নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাস এবং অবকাঠামো রক্ষা—এই উদ্দেশ্যে পুরনো কনটেইনারগুলোর বিক্রয়, ব্যবস্থাপনা ও ধ্বংস কার্যক্রম সহজ করা হয়েছে। বিশেষ করে মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিপজ্জনক কেমিক্যালবাহী কনটেইনারগুলোকে দ্রুত নিলামে তোলা বা ধ্বংসের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, নির্ধারিত সংরক্ষিত মূল্য ছাড়াই প্রথম নিলামে সর্বোচ্চ দামে পণ্য বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হবে। যেসব পণ্য আমদানি বা রফতানি নীতিমালার আওতায় নিষিদ্ধ, সেগুলো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর বা ধ্বংস করা হবে। যদি একাধিক নিলামে বিক্রি না হয়, সেক্ষেত্রে প্রচারণা চালিয়ে আগ্রহী ক্রেতার কাছে বিক্রয় করা যাবে।
এনবিআর আশা করছে, এই নিলাম কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে বন্দরের জট কমবে, কার্যক্রম আরও সহজ হবে এবং দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘নিলাম প্রক্রিয়া দ্রুত করার দাবি আমরা অনেক আগে থেকেই করে আসছিলাম। এনবিআরের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। দীর্ঘ সময় কনটেইনারে পণ্য পড়ে থাকলে তা নষ্ট হয়, আবার দেরি করলে দামও পাওয়া যায় না।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন জানান, ‘এনবিআরের নির্দেশনা অনুসারে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পড়ে থাকা কনটেইনারগুলো নিলামে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার কনটেইনারে রয়েছে মেশিনারিজ, ফেব্রিক্স, সুতা ইত্যাদি। এগুলোকে আমরা সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে বিক্রি করব।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, ‘এটি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। বন্দরে বছরের পর বছর পড়ে থাকা কনটেইনার দ্রুত সরাতে এটি সহায়ক হবে।’