
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
চামড়া বিক্রি করতে না পেরে হতাশ হয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে কিংবা মাটিতে পুঁতে দিয়ে বাড়ি ফিরছেন মৌসুমি বিক্রেতারা — এমন চিত্র দেখা গেল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম নগরীতে।
রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা মৌসুমি ব্যবসায়ী নুরুল আবসার ৫২০টি চামড়া কিনেছিলেন অলিগলি ঘুরে, যার প্রতি একটির দাম গড়ে ছিল ২০০ টাকারও বেশি। মোট ব্যয় হয় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম শহরের আতুরার ডিপো এলাকায় আসেন বিক্রির উদ্দেশ্যে। কিন্তু আজ সকাল পর্যন্ত চেষ্টা করেও একটি চামড়াও বিক্রি করতে পারেননি। কেউ ৫০ টাকাও দিতে রাজি হননি।
তিনি জানান, তাঁর সঙ্গে আরও দু–তিনজন এসেছিলেন, দুইটি পিকআপে করে চামড়া এনে। কিন্তু চা খাওয়ার খরচও উঠছে না — এমন লোকসানের কথা তিনি ভাবেননি। শেষমেশ আজ বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি চামড়া সড়কে ফেলে রেখে বাড়ির পথে রওনা দেন।
শুধু নুরুল আবসার নন, চট্টগ্রামের আতুরার ডিপো, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা এলাকার অনেক মৌসুমি বিক্রেতা চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। কেউ চামড়া পুঁতে ফেলেছেন, কেউ রাস্তায় ফেলে গেছেন, কেউ কেউ আবার লোকসান দিয়েও বিক্রি করেছেন।
ঈদের দিন এসব এলাকায় মৌসুমি বিক্রেতারা চামড়া নিয়ে বসেন। সবচেয়ে বেশি জমজমাট থাকে চৌমুহনী এলাকা, যেখান থেকে আড়তদারেরা চামড়া সংগ্রহ করেন ও নিয়ে যান আতুরার ডিপোতে — বড় বড় আড়তের জন্য পরিচিত স্থান।
আরেক বিক্রেতা দিদারুল আলম ২ লাখ ২০ হাজার টাকার চামড়া কিনেও বিক্রি করতে পারেননি। শেষমেশ হতাশ হয়ে সড়কে ফেলে গেছেন। তিনি হাটহাজারীর কাটিরহাট এলাকার বাসিন্দা।
চৌমুহনীর মোহাম্মদ হান্নান ২০টি চামড়া কিনেছিলেন গড়ে ৪০০ টাকায়। আড়তদারেরা কেউ ২০০, কেউ ১০০ টাকা দিতে চেয়েছিলেন — এত কম দামে দিতে রাজি হননি, পরে সব চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেন।
তবে ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ বেলাল কিছুটা সান্ত্বনা পেয়েছেন। শ খানেক চামড়া কিনেছিলেন গড়ে ৪৫০ টাকায়, শেষমেশ প্রতিটি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরেছেন। তাঁর মন্তব্য, “৫০ টাকা কমে হলেও বিক্রি করতে পারছি — এটাই বড় কথা। অনেকে তো কিছুই পাননি।”
আরেক বিক্রেতা মোহাম্মদ মনজু মিয়া ১০০টি চামড়া কিনেছিলেন গড়ে ৫০০ টাকায়। শেষে প্রতিটি ১২০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হন আড়তের এক প্রতিনিধিকে। তাঁর ছেলে মামুন জানান, এবার অবস্থা আরও করুণ হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুল আলম বলেন, অনেক বিক্রেতা চামড়ার দাম বেশি ধরেছিলেন বলেই বিক্রি হয়নি। কেউ কেউ আবার দেরিতে এনেছেন, ফলে চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। যদিও প্রথম দিকে চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত কেনা হয়েছে, আবার কিছু ২০০ টাকাতেও সংগ্রহ করা হয়েছে।
সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন জানান, এবার চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল এবং সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। তবে মৌসুমি বিক্রেতাদের অনেকেই বাড়তি দাম ধরে রেখেছিলেন বলে সমস্যার মুখে পড়েছেন।