জাতি হিসাবে আমরা অত্যন্ত বেহায়া এবং নির্লজ্জ, জুলাইর কাছে আর প্রত্যাশা নেই: শবনম ফারিয়া

জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া জানিয়েছেন—জুলাই আন্দোলনের পরও বাংলাদেশের মানুষের মনোভাব বদলায়নি, তাই নিজের দেশ থেকে আর কোনো প্রত্যাশাই রাখেন না।

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। নিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন বহু আগেই। জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে বেশ সরব ছিলেন এই অভিনেত্রী।

প্রত্যাশা করেছিলেন, এই গণঅভ্যুত্থ্যানের পর দেশে বড় কিছু পরিবর্তন ঘটবে। তবে সমসাময়িক কিছু ঘটনায় ও একদল সমালোচকের সমালোচনায় হতাশ অভিনেত্রী। সম্প্রতি এক দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফারিয়া জানালেন, নিজ দেশের কাছে আর কোনো প্রত্যাশা রাখেন না তিনি। পাশাপাশি ‘ডলারের কাছে কখনো নৈতিকতা বিসর্জন দেন না’ বলেও জানালেন অভিনেত্রী।

শবনম ফারিয়া তার স্ট্যাটাসে লিখেন, একটা গল্প আছে না, শীতের সকালে একজন ইমাম আর একজন চোরের? ইমাম ভাবে, কি ভালো একটা মানুষ এই ঠান্ডায় ফজরের নামাজ পরতে এসেছে! চোর ভাবে, কি ভদ্রলোক দেখতে, দাড়ি দুড়িয়ে রেখে আবার চুরি করে! এই গল্প থেকে আমরা কি শিখেছিলাম? যে যেমন, যার চিন্তাধারা যেমন, অন্যদেরও তাদের সেইমন মনে হয়!

ফারিয়া বলেন, কিন্তু বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর সব মানুষ টাকার (ডলারও পড়তে পারেন) কাছে তাদের “এথিক্স” বিক্রি করে না। দুনিয়ার “সব মানুষের” কাছে টাকাই “সব” না। মানুষ স্রোতের বিপরীতেও যায়। রিস্ক নেয়।

এরপর জুলাইয়ের ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে অভিনেত্রী বলেন, জুন মাসে যখন আন্দোলন তুঙ্গে, ইন্টারনেট চলে যাওয়ার পরপর যেসব সেলিব্রিটিদের কাছে, মেট্ররেল/বিটিভিতে আগুন দেয়ার প্রতিবাদ করার জন্য ভিডিও বানাতে বলা হয়, আমিও তাদের মধ্যে একজন। আমি প্রথমে সময় চাই, বলি ভেবে জানাবো। স্বাভাবিক, সে সময় ডিরেক্ট না করার মতো সাহস যোগাড় করতে পারিনি। তারাও বলে সময় নেন, আপাতত এমনেই ইন্টারনেট নাই। যেহেতু হোয়াটআপ বন্ধ, তাও সিয়ামকে মেসেজ দেই—‘তুমি কি কল পেয়েছো?’। সে আমাকে জানায়, পেয়েছে এবং না করেছে। তখন আমিও সাহস পাই এবং না বলে দেই।

ফারিয়া বলেন, এসব কথা অযথা বলে বেড়ানোর কোন ইচ্ছা আমার ছিল না। সেসময় এটাই করার কথা, না বলেছি বলে আমি বিশেষ কোন ক্রেডিট নিতে চাইনি। যেহেতু আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ কোনভাবেই জড়িত না, অদূর ভবিষ্যতেও কোন ইচ্ছা কিংবা পরিকল্পনা নেই তাও যখন দেখি কেউ লেখে ‘এরা তো ডলার খাইছে’—মার্কা কল্পনিক গল্প, হাসা ছাড়া কিছু করার থাকে না।

শবনম ফারিয়া আরও বললেন, আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি যারা মন থেকে আওয়ামী লীগ ভালোবাসে। কিন্তু জুলাইতে লাল ডিপি দিয়েছিল। হয়তো জুলাইকে আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে যেভাবে সে সময় পোট্রে করা হয়েছে এটা এখন তেমন নাই, কিন্তু সেসময় আপনি যদি মানুষ হয়ে থাকেন, অমানুষ না হোন তাহলে আপনি কোনো মানুষকে হত্যা করার প্রতিবাদ না করে থাকতে পারতেন না, আপনার রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা মতাদর্শ যাই হোক।

নিজ দেশের কাছে আর কোনো প্রত্যাশা রাখেন না জানিয়ে ফারিয়া লিখেন, এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য দেওয়া বন্ধ করলাম। কারণ, ফাইনালি আমি বুঝে গেছি, জাতি হিসাবে আমরা অত্যন্ত বেহায়া এবং নির্লজ্জ, আমরা কখনো ভালো হবো না। যত আন্দোলন হোক, সরকার পরিবর্তন হোক, যতই শান্তিপূর্ণভাবে নোবেল পাওয়া মানুষ আসুক, আমাদের কেউ দুর্নীতি এবং চুরি করা থেকে আটকাবে না। শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ—যেই ক্ষমতা পাবে, সেই তার অসৎ ব্যবহার করবে। আমি আর আমার নিজ দেশের কাছে আর কোন প্রত্যাশা রাখি না।

পরিশেষে বলতে চাই, সত্যি সত্যি ডলার পেলে ভালোই লাগতো। শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগে ২৫৩০০ টাকা দিয়ে ২০০ ডলার পাসপোর্টে এন্ডোর্স করতে খুবই কষ্ট হইছে।


অন্যান্য পত্রিকার হেডলাইন:

“আমি বুঝে গেছি এই জাতির কিছুই হবে না : শবনম ফারিয়া” — জাগোনিউজ২৪

“রাজনীতি নিয়ে আর কিছু লিখবেন না ফারিয়া, কারণ…” — প্রথম আলো

“‘যতই আন্দোলন ও সরকার পরিবর্তন হোক, কেউ দুর্নীতি-চুরি আটকাতে পারবে না’” — Channel24

“‘দেশের কাছে আর কোন এক্সপেকটেশন রাখি না’” — দৈনিক ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *