জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলা: বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুর বরদাশত করা হবে না – সেনাবাহিনী

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলার ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত’ বলে মন্তব্য করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ)। পাশাপাশি বিএনপি এই ঘটনার সঙ্গে তাদের দলের দুই সদস্য জড়িত থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেছে।

রবিবার (১ জুন) রাতে রংপুর স্টেডিয়ামে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে বৈঠক শেষে দুই সংগঠনের নেতারা সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা জানান।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী এবং বৈছাআ’র রংপুর মহানগর ও জেলা কমিটির নেতারা।

বৈঠক শেষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম বলেন, “আমরা আনন্দিত যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির প্রতিনিধিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছেন। যারা আবেগে বা অন্য যেকোনো কারণে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাদের চিহ্নিত করার সুযোগ আমরা দিয়েছি। তারা নিজেরাই জানিয়েছেন যে ভবিষ্যতে এমন কিছু আর করবেন না।”

তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে। ভাঙচুর বা মব-ভিত্তিক বিশৃঙ্খলা, যেকোনো ধ্বংসাত্মক কাজ দেশের কোথাও বরদাশত করা হবে না।”

জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে কোনো হামলার প্রমাণ মিললে সে বিষয়েও আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কেউ বৈছাআ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে থাকলে, সেই তথ্য-প্রমাণ দিতে অনুরোধ করেন।

বিএনপির নেতা সামসুজ্জামান সামু জানান, রংপুরের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় তাদের দুই কর্মী ভুলের অংশ ছিলেন এবং তারা এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যতে এমন কিছু হবে না বলেও আশ্বাস দেন।

বৈছাআ’র রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “২৯ মে আমাদের একটি মিছিলের ওপর জাতীয় পার্টির ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ হামলা চালায়। পরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় অনেকেই আত্মরক্ষার্থে ইট ও গাছের ডাল নিয়ে নেয়। এ ঘটনা থেকে উত্তেজনা তৈরি হয়।”

তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যেন রংপুরে এই উত্তেজনা আর না বাড়ে। তবে কেউ যদি অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”

জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, “আমাদের মিছিলে হামলা হয়েছে। আত্মরক্ষার জন্যই ছত্রভঙ্গের মতো কিছু ঘটনা ঘটে। কেউ সংঘর্ষে জড়ায়নি। এসব তথ্য সেনাবাহিনীকে দিয়েছি।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হয়েছে। সাবেক মেয়রের নেতৃত্বে ২৯ মে যে বিক্ষোভ মিছিল হয়, সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজনও উপস্থিত ছিলেন। তাদের বর্তমান অবস্থান জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে জি এম কাদেরের রংপুর নগরের বাড়ি ‘দ্য স্কাইভিউ’তে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা জানালার কাচ ভাঙচুর এবং একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনার সময় জি এম কাদের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।

এই ঘটনায় ৩১ মে রাত ১২টার পর সেনাবাহিনী বৈছাআ ও বিএনপির নেতাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং হামলার ভিডিও দেখিয়ে শনাক্ত করতে সহযোগিতা চায়। উপস্থিত ছিলেন সারজিস আলম, যিনি ব্রিগেড কমান্ডারের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে চলে যান।

এদিকে, জাতীয় পার্টি ও এনসিপির পক্ষ থেকে এই হামলার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা করা হয়েছে বলে জানান কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আতাউর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *