
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
ঢালাওভাবে মামলা ও গ্রেফতার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়—এমন মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. শাহনাজ হুদা। তিনি একটি জাতীয় দৈনিকে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, গ্রেফতার করার আগে অবশ্যই যথাযথ তদন্ত হওয়া জরুরি।
ড. হুদা বলেন, যদি মামলার তদন্ত পরে করতে হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে এত বিপুল সংখ্যক মামলার তদন্ত পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য কি আছে? থানায় তো শত শত উপপরিদর্শক প্রয়োজন হবে, যা বাস্তবে অনুপস্থিত। ফলে একটি সঠিক তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। এই অবস্থায় সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তিনি আরও বলেন, একটি মামলায় ৩০০-৪০০ জন আসামি থাকার বিষয়টি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। যারা ফৌজদারি আইন নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি পর্যালোচনা করা উচিত। আমাদের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড (ফৌজদারি কার্যবিধি) কী বলছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
মামলা হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করার প্রয়োজনীয়তা কতটা, সে বিষয়েও পর্যাপ্ত স্পষ্টতা নেই বলেও মত দেন তিনি। তাঁর মতে, আইনে কোনো অস্পষ্টতা থাকলে তা অবশ্যই পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক আরও বলেন, একটি থানায় হাজার হাজার মামলা থাকে, সবগুলোর তদন্ত করতে গেলে তো বহু বছর লেগে যাবে। এর মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কী হবে? যদি শত শত লোকের বিরুদ্ধে একসঙ্গে মামলা হয় এবং পরে তদন্তের কথা বলা হয়, তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার গ্রেফতারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদিও এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানেন না, তবে তাঁর উপরের বক্তব্য সেই ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ড. শাহনাজ হুদা বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে আইন পড়ান, তবে ঢালাও মামলা ও গ্রেফতারের সমাধান কী হতে পারে, তা নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। যাঁরা ফৌজদারি আইন পড়ান, তাঁদের সঙ্গে সরকার চাইলে আলোচনা করতে পারে। বর্তমান সরকারের অন্তর্বর্তী পর্বে যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়, তাহলে কি সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে? নিশ্চয়ই একটি কার্যকর সমাধান থাকা উচিত, যা সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। অন্যথায় এই প্রবণতা মানুষের ওপর নির্যাতনে পরিণত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃত অপরাধী যদি থাকে, অবশ্যই তার বিচার হওয়া দরকার। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার আগে সবাই নির্দোষ, এটিই মূলনীতি। অপরাধ প্রমাণে দীর্ঘসূত্রতা থাকলে ন্যায়ের কোনো বাস্তবিক মূল্য থাকে না। এমনকি নির্দোষ হলেও যদি বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে ৫ থেকে ১০ বছর লেগে যায়, তাহলে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। এই অবস্থা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক।