
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
বাংলাদেশের রাজশাহীতে এক কাঠ ব্যবসায়ীর বাড়িতে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুসারে, স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। সোমবার দুপুরে এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর নাম আবদুল হান্নান। তিনি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার হাতিনাদা গ্রামের বাসিন্দা এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক হলেও সক্রিয়ভাবে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত নন বলে জানিয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি রফিকুল ইসলাম, যিনি বানেশ্বর ইউনিয়ন বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং একই ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য।
আবদুল হান্নানের ভাষ্যমতে, তাঁর ছোট ছেলে তুষার আহমেদ স্থানীয় নন্দনপুর বাজারের এক চায়ের দোকানে মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে বসে ছিল। এসময় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে চোখাচোখি হওয়ায় তিনি তুষারকে মারধর করেন। এরপর আবদুল হান্নান ছেলেকে শান্ত করেন এবং জানান, বিষয়টি নিয়ে কিছু করতে হবে না।
কিছুক্ষণ পর, বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম আরও কিছু লোক নিয়ে হান্নানের বাড়িতে হামলা চালান। হান্নান তাঁর বড় ছেলেকে নিয়ে পাশের একটি বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। এদিকে হামলাকারীরা বাড়ির মালামাল ভাঙচুর করেন এবং আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে রান্নাঘর, খড়ির ঘর ও একটি ছোট ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এছাড়াও, দুটি ছাগল ও একটি গরুও আগুনে মারা যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং সেনাবাহিনী এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আবদুল হান্নানের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর থেকে রফিকুল ইসলাম তাঁর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছিলেন এবং না দিলে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি তখন স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, তাঁকে মেরেও ফেললেও চাঁদা দেবেন না।
চাঁদার কারণ সম্পর্কে হান্নান বলেন, রফিকুল ইসলামের রাজনৈতিক পরিচয় বিএনপি হলেও তিনি আওয়ামী লীগে ভোট দেন, মিটিং মিছিলে যান না। শুধু ভোটার হওয়াতেই তাঁর কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে বলে ধারণা তার।
সোমবার বিকেলে হান্নানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির একটি ফলের গাছসহ বাড়ির অংশ বিশেষ পুড়ে গেছে। শোবার ঘরগুলো ভাঙচুর হলেও সেখানে আগুন লাগেনি। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত উপস্থিত হয়েছিলেন।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় যুবক ইকবাল হোসেন জানান, চায়ের দোকানে তুষার ও তার মামাতো ভাই হাসাহাসি করছিল। রফিকুল ইসলাম ধারণা করেন, তা তাঁকে লক্ষ্য করেই হচ্ছে। পরে তুষারকে মারধর করা হয়। তুষার বাড়িতে গিয়ে জানানোর পর, আবদুল হান্নান উত্তেজিত হয়ে রফিকুল ইসলামকে উদ্দেশ করে চিৎকার করেন। এর পরপরই রফিকুল ইসলাম তার অনুসারীদের নিয়ে বাড়িতে হামলা করেন।
রফিকুল ইসলামের বাড়ি আবদুল হান্নানের বাড়ির পাশেই। একই বংশেরও তারা। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান গেট তালাবদ্ধ, বাড়ি ফাঁকা এবং মাটির দেয়ালে কুড়ালের কোপ ও টিনের চালায় ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, রফিকুল ইসলাম এ ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে নিজের বাড়িতেও হামলার অভিযোগ করছেন।
এদিকে পুঠিয়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা দুলাল হোসেন জানান, আবদুল হান্নান থানায় একটি এজাহার জমা দিয়েছেন এবং এতে রফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে যে, তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়েছে।