বিএনপি-যুবদলের দ্বন্দ্বে প্রাণ গেল ছাত্রদল নেতার, গ্রামজুড়ে চলছে লুটপাট

চাতলপাড় ইউনিয়নের কাঠালকান্দি গ্রামে বিএনপির দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যুর পর পুরো গ্রামে চলছে লুটপাট, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, নিরাপত্তাহীনতায় ঘর ছেড়েছে শতাধিক পরিবার।

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের চাতলপাড় ইউনিয়নে বিএনপি ও যুবদলের দুটি গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল নেতা মো. সোহরাব মিয়াকে হত্যা করার পর পুরো কাঠালকান্দি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে তাণ্ডব। বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট আর সহিংসতার আতঙ্কে শতাধিক পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ কেউ রয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, চাতলপাড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোল্লা গোষ্ঠীর মোতাহার মিয়া ও যুবদলের সভাপতি উল্টা গোষ্ঠীর মো. গিয়াস উদ্দিনের মধ্যে চলছিল পুরনো দ্বন্দ্ব। গত শনিবার (৫ জুলাই) উভয় গোষ্ঠীর সংঘর্ষে মোল্লা গোষ্ঠীর মো. সোহরাব মিয়া নিহত হন। তিনি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

সোহরাবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন উল্টা গোষ্ঠীর বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালায়। ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে, আগুন লাগিয়ে দেয়, আর চলে লুটপাট। গোয়াল থেকে নেওয়া হয় ১২টি গরু এবং গোলা থেকে প্রায় এক হাজার মণ ধান।

এছাড়া চাতলপাড় বাজারের ছয়টি দোকানও হামলার শিকার হয়। চালের আড়ত, মোবাইল ও বিকাশের দোকান, রড-সিমেন্টের দোকান এবং একটি ফ্রিজের শোরুমও রক্ষা পায়নি। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, এসব দোকান থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার পণ্য লুট করা হয়েছে।

গত তিনদিন ধরে কাঠালকান্দি গ্রামে এ লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। বেশ কিছু বাড়ি এখন পুরুষশূন্য। সাফিয়া বেগম নামে এক নারী জানান, তার স্বামী অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন। কিন্তু মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন তাদের ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। তার ছেলে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ঘর তুলেছিল, এখন সব শেষ।

অন্তঃসত্ত্বা কোহিনুর বেগম অভিযোগ করেন, তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গলা থেকে স্বর্ণালংকার ও ঘরের জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে। এমনকি ওষুধও নিয়ে গেছে। তার হাত-পা বেঁধে রেখে চলে যায় হামলাকারীরা।

চাতলপাড় বাজারের ব্যবসায়ী হামজা বলেন, তার দোকানে থাকা ২৫ লাখ টাকা নগদ ও রড-সিমেন্টের সব মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

চাতলপাড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সোহরাব খান জানান, বাজারে তার নিজেরও ব্যবসা রয়েছে। কিন্তু এখন সেখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। তিনি প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান।

অন্যদিকে, মোল্লা গোষ্ঠীর মোতাহার হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উল্টা গোষ্ঠীর লোকজনই নির্মমভাবে সোহরাবকে হত্যা করেছে। তারা নিজেরাই বাড়ি-ঘর ও দোকান ভেঙে নিজেদের ক্ষতি করেছে।

চাতলপাড় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে তেমন কোনো নিরাপত্তাহীনতা নেই। জনবল কম থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঠিক কতটি বাড়ি ও দোকানে লুট হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *