মব সহিংসতা বন্ধ না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: মান্না

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর অস্পষ্টতা ও সংস্কার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, দেশে যেভাবে মব সহিংসতা চলছে, তা বন্ধ না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তিনটি মেয়াদে দেশে নির্বাচনের নামে যা হয়েছে, তাতে মানুষের সামনে মুখ দেখানোর উপায় নেই। পৃথিবীর কাছে আমাদের সম্মান নষ্ট হয়েছে। যদি এই সরকার ভালো নির্বাচন করে যেতে পারে, দেশের সম্মান বাঁচবে। তবে পাটগ্রামে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, বরিশালে যেভাবে মব চলছে— সেটা বন্ধ করতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে?

শনিবার (৫ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ কতটুকু সুরক্ষা দেয়’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ঐকমত্যের বৈঠকগুলোতে আমি আগে নিয়মিত যেতাম, এখন মনে হয়— গিয়ে লাভ নেই। অনেক বিষয়েই এমন মতভেদ তৈরি হয়েছে। আমি জানি না, কীভাবে নিষ্পত্তি হবে। ঐকমত্য না হলে তো প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, কিছু চাপিয়ে দেবেন না। তাহলে সংস্কার কীভাবে হবে? এক বছরে কিছুই পারেননি। বড় দল বা মাঝারি দল আপত্তি করলে, সেখানেও যেতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় সংস্কার একটা ভালো নির্বাচন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, সংস্কার নিয়ে এত কথা হচ্ছে। আমি যদি জিজ্ঞেস করি— বলুন তো ভাই, কোন সংস্কারটা এই সরকার করেছে? সরকার কিন্তু বলতে পারবে না। বলবে, আলোচনা শেষ হয়নি, ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি— তাহলে এক বছরে কিছুই করেননি।

তিনি আরও বলেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে আমরা আপত্তি করছি। আজকের এই সেমিনারে যারা বক্তৃতা করেছেন, তারা বাংলাদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক কণ্ঠস্বরের প্রতিনিধিত্ব করেন, তারা সবাই এটি নিয়ে আপত্তি করছেন। এখনও সময় আছে, যে অধ্যাদেশ করেছেন, এটি সংশোধন করুন। আর না করলে না করে যেতেই পারেন, তবে পরে এটি ঠিক করা হবে।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভাষা আন্দোলনে জীবন দিয়েছে, স্বায়ত্তশাসন, গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলন এবং ২৪-এর জুলাই-আগস্টের আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে অনেকে জীবন দিয়েছে। এত জীবন দেওয়ার পর এখনও অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা হয়, এটা কেন হবে? আর কত জীবন দেবে এ দেশের মানুষ। আর কত লড়াই করবে এ দেশের মানুষ। মানুষ প্রাইমারি স্কুল থেকে হাইস্কুলে ওঠে, হাইস্কুল থেকে কলেজে যায়, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, আস্তে আস্তে মানুষ উন্নত হয়। আস্তে আস্তে মানুষের পরিবর্তন হয়, ইতিবাচক পরিবর্তন। আর আমরা বারবার যেন সাপ-লুডুর মতো অনেকদূর আগে যাই। আবার সাপে কাটলে নিচে চলে আসি। আবার আগানোর চেষ্টা করি। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, যারা আইন প্রয়োগের দায়িত্বে তারা যদি আইন প্রয়োগে কোনও ভুল করে, ইচ্ছাকৃত ভুল এবং তারা যদি অন্যায়ভাবে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে জনগণের ওপর নিপীড়ন চালায়, তাদের শাস্তির বিধান কোথায়? সংস্কার নিয়ে আলাপ হচ্ছে— সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, আমাদের যে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো বিশাল ক্ষমতার অধিকারী যারা, তাদের কী হবে? হয় তারা পদত্যাগ করবে কিংবা তাদেরকে অবসর দেওয়া হয়। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ একটা দেশের বা অন্য একটা মানুষের কতই বা ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু যারা বড় বড় পদে বসে আছে, যারা বড় বড় দায়িত্ব পালন করছে, তারা তো এই দেশ এবং দেশের মানুষের অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এই যে সুরক্ষা আইন, এসব আইনের যারা কার্যকর করবে, যারাই ক্ষমতার অধিকারী হবে রাষ্ট্রের মাধ্যমে, তাদের প্রত্যেককেই দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহির আওতায় রাখা। আর সে কারণে তারা যদি তাদের দায়িত্ব পালনটা অবহেলা করে, কিংবা অপরাধমূলক কোনও কাজে যুক্ত হয়, তাহলে তাদের যেন শাস্তি হয়। সেই বিধান যেন প্রত্যেক আইনে থাকে এরকম একটা দাবিও আমাদের থাকা দরকার। আর না হলে আইনের ভাষা যত সুন্দরই করি, আমাদের যত আকাঙ্ক্ষা, আমাদের আইনের লিপিবদ্ধ কাগজ দিয়ে সাধারণ মানুষের কল্যাণ হবে না।

অন্য পত্রিকার হেডলাইন:

মব বন্ধ করতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে: মান্না – আজকের পত্রিকা

আইনে অস্পষ্টতার সুযোগে জনগণের ওপর নিপীড়ন চলে: নজরুল ইসলাম খান – প্রথম আলো

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আসেনি: নজরুল ইসলাম খান – সংবাদ ডটনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *