মব সৃষ্টি করে ১০ মাসে ১৭২ জন নিহত

বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগে মব বিচারে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন।
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

রাজধানী ঢাকার দারুস সালামের দ্বীপনগর এলাকায় গত ৩১ মে তানভীর ও ফাহিম নামে দুই তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, নিহতরা মাদক কারবারে জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তারা হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল, ফলে উত্তেজিত জনগণ তাদের মেরে ফেলে। পরদিন রাসেল নামে এক কিশোরের মরদেহ একই এলাকা থেকে উদ্ধার হয়।

বাংলাদেশের দারুস সালাম থানার সহকারী কমিশনার ইমদাদ হোসেন জানান, ঘটনার সময় লোকজন রেগে গিয়ে পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তানভীর ও ফাহিম মারা যান। ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ঘটনা শুধু রাজধানী নয়, গত ১০ মাসে বাংলাদেশের আট বিভাগে ১৭২ জনকে এইভাবে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটি জানায়, কখনও চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি অথবা রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগে এমন মব সৃষ্টি হয়। এইসব ঘটনায় নিহত অনেকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা পর্যন্ত ছিল না।

আসকের পরিসংখ্যান বলছে, গত আগস্ট থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১৭২ জনকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৮০ জন, চট্টগ্রামে ২৮ জন, রাজশাহী ও বরিশালে ১৬ জন করে, খুলনায় ১৪ জন, রংপুরে ৭ জন, ময়মনসিংহে ৬ জন এবং সিলেটে ৫ জন। সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে—সেই মাসে ২৮ জন নিহত হন।

এই পরিস্থিতিকে ভয়াবহ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান। তিনি বলেন, এ ধরনের হত্যা পরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃত, যার জন্য বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন হতে পারে।

পুলিশ ও সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও এখনো পুরোপুরি প্রতিরোধ সম্ভব হয়নি। তবে র‍্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশ কিছু এলাকায় মব প্রতিহত করতে পেরেছে। যেমন ১৬ মে ধানমন্ডিতে এক প্রকাশকের বিরুদ্ধে মব গঠিত হলেও পুলিশের দৃঢ় অবস্থানে তা থেমে যায়। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রংপুরে সাম্প্রতিক সময়েও কয়েকটি মব প্রতিহত করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাইকিং করে জনগণকে ৯৯৯ বা কাছের থানায় অভিযোগ জানাতে বলেছে। এআইজি ইনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, যেকোনো মব গঠনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা রয়েছে।

রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কাজী লতিফুর রেজা বলেন, বিচারব্যবস্থার বাইরে গিয়ে কাউকে হত্যা করা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি জনসচেতনতা বাড়ানো, গুজব প্রতিরোধে দ্রুত তথ্য যাচাই এবং কড়া আইন প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন।


অন্যান্য পত্রিকার উল্লেখ হেডলাইন এবং তথ্যসূত্র:
– প্রথম আলো: “১০ মাসে মব গঠনের শিকার হয়ে নিহত ১৭২”
– কালের কণ্ঠ: “মব গঠন করে হত্যা, অধিকাংশই নিরপরাধ”
– যুগান্তর: “বাংলাদেশে মব জাস্টিসের শিকার শতাধিক মানুষ”
– বাংলাদেশ প্রতিদিন: “ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনায় উদ্বেগ”
– The Daily Star: “Mob Justice kills 172 in 10 months, most without trial”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *