
বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে হান্নান মাসুদ বলেন, যদি ছাত্রদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হতো, তাহলে এই অভ্যুত্থানের ফলাফল হতো আরও বিস্ময়কর এবং দেশ পেত এক নতুন রূপ।
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
আব্দুল হান্নান মাসুদ বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পুরো জুলাই মাসজুড়ে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন এবং কখনো ফেসবুক লাইভ, কখনো সাংবাদিকদের বার্তা পাঠিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান। সম্প্রতি বাসস-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আন্দোলনের নানা দিক তুলে ধরেন, যা অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ করে।
হান্নান মাসুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের চাপে তাকে হল ছাড়তে হয়। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে। পরবর্তীতে ন্যায়ের প্রশ্নে আপোষ না করে সেখান থেকেও সরে আসেন।
২০২২ সালে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ক্যাম্পাসে ছাত্রদের উপর দমন-পীড়ন ও জাতীয় পর্যায়ের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি থেকে তারা প্রথম মিছিল বের করেন। এরপর ১২ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে।
১২ জুন অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন তারা। সেখান থেকেই ৩০ জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম এবং এরপর ১ জুলাই থেকে নতুন কর্মসূচির সূচনা। ৪ জুলাই আদালতের রায়ের আগেই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামটি তিনি প্রস্তাব করেন, যা পরবর্তীতে গৃহীত হয়।
১৪ জুলাই শেখ হাসিনার ‘রাজাকার’ মন্তব্যের প্রতিবাদে রাতেই শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। নারীরা থালা-বাটি বাজিয়ে অংশগ্রহণ করে, যা ছাত্রলীগের পতনের সূচনা বলে হান্নান মনে করেন।
১৫ জুলাই ছাত্রলীগ হামলা চালায় রাজু ভাস্কর্যের অবস্থান কর্মসূচিতে। পরবর্তীতে তারা ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ও অন্যান্য সংগঠনের সহায়তা চেয়েও সাড়া না পেয়ে নিজেরাই বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
১৬ জুলাই পুলিশ গুলি ছোঁড়ে, হান্নান মাসুদের দুই পায়ে রাবার বুলেট লাগে। এরপর থেকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।
১৭ জুলাই শিক্ষার্থীদের সমর্থন দেখে আবেগে আপ্লুত হন হান্নান। ১৯ তারিখ রাতে ৯ দফা ঘোষণা এবং নাহিদ ইসলামকে তুলে নেওয়ার পর তার উপর প্রচণ্ড চাপ আসে আলোচনায় বসার। ডিবি অফিসাররাও হুমকি দেন।
গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনের পর তিনি গোপনে স্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। মার্কিন দূতাবাস পর্যন্ত গিয়েও সেখানে আশ্রয় পাননি। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় এক রাত নিরাপদে থাকেন।
এরপর শহীদুল আলম, গাফফার ভাই, জুলকারনাইন সায়েরসহ অনেকের সহায়তায় তিনি বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেন। সেখান থেকেই কর্মসূচি পরিচালনা করেন।
২ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাকে স্বপরিবারে দেখা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। ওইদিনই তিনি ফেসবুক লাইভে বলেন—”গণভবনে থাকার অধিকার প্রধানমন্ত্রীর নেই।”
মার্চ টু ঢাকা একদিন এগিয়ে ৪ তারিখ করা হয়। এরপর ৫ তারিখ শেখ হাসিনার পতনের দিন হান্নান মাসুদের অনুভূতি ছিল গভীর। তিনি বলেন, যদি সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারত, তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত।
📰 অন্যান্য পত্রিকার হেডলাইন:
- জুলাইয়ের পর দেশ হতো ভিন্ন : হান্নান মাসুদ – প্রথম আলো
- স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দিলে বাংলাদেশ অন্য রকম হতো : হান্নান মাসুদ – বাংলা ট্রিবিউন
- শেখ হাসিনার পতনের পর বাস্তবতা পাল্টে যেত : হান্নান মাসুদ – কালের কণ্ঠ