‘হাত ধরা’ নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

বাংলাদেশের একটি গ্রামে ভোররাতে ‘হাত ধরে ক্ষমা চাওয়াকে’ কেন্দ্র করে শুরু হওয়া উত্তেজনা রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে তুমুল ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১০ জুন ২০২৫) সকাল পাঁচটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের শ্রীঘর গ্রামে সংঘর্ষটি ঘটে বলে নিশ্চিত করেন নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খায়রুল আলম।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে সোহেল মিয়ার জমি থেকে শসা চুরির সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে হৃদয় মিয়া, যিনি জালাল মিয়ার ছেলে। এরপর সোহেলের পরিবার বিষয়টি হৃদয়ের পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে। হৃদয়ের লোকজন ‘হাত ধরে ক্ষমা’ চাইলেও তাদের পক্ষের প্রভাবশালী মীর্জা আলী সেটিকে অপমান হিসেবে দেখে হুমকি দেন—ঘটনার জবাব তারা পরে দেবে।

এই ঘটনার জের ধরেই পরদিন ভোরে দুই পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর চড়াও হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা এই সংঘর্ষে উভয়পক্ষের নারী-পুরুষ ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর।

সোহেল মিয়ার পক্ষের আহতদের মধ্যে রয়েছেন: জুয়েল মিয়া, সুহেল মিয়া, লুদন মিয়া, জসিম মিয়া, কাউছার মিয়া, আরমান মিয়া, সালমান মিয়া, সালাম মিয়া, তুহিন বেগম, জুনাইদ মিয়া, ফকির চান বেগম, ফারুক মিয়া, সবুজ মিয়া, মুন্না মিয়া, ইমরান হোসাইন, সফর আলী, জিহাদ মিয়া, পিন্টু মিয়া, জাফর মিয়া, সুলেমান মিয়া ও সজিব মিয়া।

অন্যদিকে হৃদয় মিয়ার পক্ষের আহতরা হলেন: তোতা মিয়া, সরাজ মিয়া, জালাল মিয়া, ফুলজাহান বেগম, রাব্বি মিয়া, সাদেক মিয়া, সেলিম মিয়া, রজব আলী, কাউছার মিয়া, আলম মিয়া, আমীর আলী, ডালিম মিয়া, শামীমা আক্তার, ইনন মিয়া, ছফিল উদ্দিন, উত্তম মিয়া, আক্তার মিয়া, আজাদ মিয়া, নুরল হক, এনামুল হক, এনাব আলী, দুলাল মিয়া, জিলু মিয়া, সোরাব আলী, উজ্জ্বল মিয়া, মুরসালিন সরকার, রাজ্জাক সরকার, সুমন সরকার, হাফিজ মিয়া, এমরান আলী, নাবিন আলী, ফজু মিয়া, আকিক মিয়া, সাহেদ মিয়া এবং নজরুল হক সরকার।

আহতদের অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং বাকিরা ভর্তি রয়েছেন নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

হৃদয় মিয়ার পক্ষে থাকা মীর্জা আলী ও তাঁর ছেলে রাকিবুল হাসান অভিযোগ করেন, “আমাদের বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগ তুলে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। আত্মরক্ষার চেষ্টায় আমাদের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে।”

অন্যদিকে, সোহেল মিয়ার পরিবারের দাবি, “হৃদয় আমাদের জমি থেকে শসা চুরি করেছিল। তার পরিবারকে জানানো হলে, উল্টো তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়।”

নাসিরনগর থানার ওসি মো. খায়রুল আলম বলেন, “শসা চুরি নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। বর্তমানে এলাকা শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ জন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে, তবে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *