৬ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আজ থেকে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

রাজধানীর চানখাঁরপুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান আনাসসহ ছয়জন নিহতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজ (২৫ মে) থেকে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আলোচিত মামলাটির বিচার একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করল।

এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ২০ এপ্রিল জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা, যা আজ আদালতে উপস্থাপন করা হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলির ঘটনায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ মোট আটজন পুলিশ সদস্য জড়িত ছিলেন, যাদের মধ্যে চারজন বর্তমানে পলাতক এবং বাকি চারজন কারাগারে আছেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে শান্তিপূর্ণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) প্রাণঘাতী হামলা চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন:

শাহরিয়ার খান আনাস

শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ

মো. ইয়াকুব

মো. রাকিব হাওলাদার

মো. ইসমামুল হক

মানিক মিয়া শাহরিক

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠে।

তালিকাভুক্ত অভিযুক্তরা হলেন:

হাবিবুর রহমান (সাবেক ডিএমপি কমিশনার)

সুদীপ কুমার চক্রবর্তী (সাবেক যুগ্ম কমিশনার)

শাহ আলম (সাবেক এডিসি, রমনা)

মো. আখতারুল ইসলাম

মো. ইমরুল (সাবেক সহকারী কমিশনার)

মো. আরশাদ হোসেন (সাবেক ওসি, শাহবাগ)

মো. সুজন হোসেন (কনস্টেবল)

ইমাজ হোসেন

মো. নাসিরুল ইসলাম

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং গুলির নির্দেশ প্রদান ও সহায়তা করেছেন। পরবর্তী সময়ে কোনো তদন্ত না করায় তাদেরকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নাম উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে
একটি অডিও কল প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশ দেওয়ার প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করা হয়। এতে দেখা যায়, সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সেই নির্দেশ তার অধীনস্তদের জানান এবং চাইনিজ রাইফেল দিয়ে সরাসরি গুলির নির্দেশ দেন।

প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুতে রয়েছে:

৯০ পৃষ্ঠার বিশ্লেষণ

৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি

১৯টি ভিডিও, ২টি অডিও প্রমাণ

১১টি সংবাদ প্রতিবেদন ও ১১টি বই

জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন

নিহত ৬ জনের ডেথ সার্টিফিকেট

বিচার কার্যক্রম ও পরবর্তী ধাপ
প্রসিকিউশন থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগ গঠনের পর আসামিপক্ষকে ৩ সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে তাদের আইনি প্রস্তুতির জন্য। এরপর ঈদের পর আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে। সাবেক ওসি আরশাদ হোসেনের আইনজীবী জানান, প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর তাঁরা জামিনের আবেদন করবেন এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠন ও জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৩৩৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২২টি হত্যা ও গুম সংক্রান্ত। অভিযুক্ত ১৪১ জনের মধ্যে ৫৪ জন গ্রেপ্তার এবং ৮৭ জন এখনো পলাতক রয়েছেন। এদের মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক, ৬২ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং ৯ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

এছাড়া আশুলিয়ায় ৫ আগস্ট সংঘটিত গুলির ঘটনায় ছয় মরদেহ পোড়ানোর মামলার তদন্তও শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং শিগগিরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *