
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা হারানো নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকার তাদের তিন মেয়াদে সারাদেশে মোট ১৯ হাজার ৫৯৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান করেছিল। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার লাইসেন্স রাজনৈতিক বিবেচনায় ইস্যু করা হয়।
গণ-অভ্যুত্থানের পর এই লাইসেন্স ও অস্ত্র ইস্যু ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৪ সালে এইসব লাইসেন্স বাতিল করে দেয়, ফলে সেগুলো অবৈধ হয়ে যায়। সরকার তখন নির্দেশ দেয়, যাদের কাছে অস্ত্র রয়েছে তারা যেন ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেগুলো সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেন। কিন্তু জমা পড়ে মাত্র ১৩ হাজার ৩৪৯টি অস্ত্র। অর্থাৎ প্রায় ৬ হাজার ২৪৫টি অস্ত্র এখনো জমা পড়েনি।
এই অস্ত্রগুলো কার কাছে আছে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। অনুমান করা হচ্ছে, কিছু অস্ত্র এখনও আগের মালিকদের কাছে রয়েছে এবং কিছু বিক্রি হয়ে গেছে। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছে—বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
অনেক লাইসেন্সধারীর টিআইএন নম্বর না থাকা সত্ত্বেও তারা লাইসেন্স পেয়েছেন, যদিও নিয়ম অনুযায়ী দুই লাখ টাকা রিটার্ন বাধ্যতামূলক ছিল। অধিকাংশ লাইসেন্সধারী আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা দেননি, তাদের মধ্যে ৭৭৮ জনের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। শুধু ঢাকাতেই বাতিল হয়েছে ৩৮১টি লাইসেন্স। পাবনায় ১৪১, চট্টগ্রামে ৭৩, যশোরে ৬৬ ও কক্সবাজারে ৩৮টি লাইসেন্স বাতিল হয়। বাতিল হওয়া লাইসেন্সধারীদের মধ্যে আছেন এমপি, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে, আবার কেউ আত্মগোপনে থাকায় অস্ত্র জমা দেননি। গণ-অভ্যুত্থানের সময় অনেক নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট হয়। ফলে অস্ত্রগুলোর সঠিক অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। উদ্ধার অভিযান চালানো হলেও অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
গণ-অভ্যুত্থানের পর সারা দেশের বিভিন্ন থানা থেকে হামলা চালিয়ে ৫ হাজার ৭৫৩টি অস্ত্র ও ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২টি গুলি, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড লুট হয়। এই বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে মাত্র কিছু অংশ উদ্ধার করা গেছে। এখনো বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিখোঁজ রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪ হাজার ৩৮৪টি, বাকি ১ হাজার ৩৬৯টি এখনো খোঁজ মেলেনি। গোলাবারুদের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭টি, আর ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪৫টি বাকি রয়েছে।
এসএমজি, এলএমজি, পিস্তল, রাইফেল, শটগান, গ্যাস গানসহ নানা ধরনের অস্ত্র এবং টিয়ারগ্যাস সেল, গ্রেনেড, ফ্ল্যাশ ব্যাংের মতো বিপজ্জনক সরঞ্জাম এখনো উদ্ধার হয়নি। বিশেষ করে গণভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফ সদস্যদের ৩২টি অত্যাধুনিক অস্ত্র এখনো নিখোঁজ।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, এসব অস্ত্র এখন বিভিন্ন অপরাধী, চরমপন্থী এবং রাজনৈতিক ক্যাডারদের হাতে চলে গেছে। ইতিমধ্যে এসব অস্ত্র বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত হয়েছে। যতদিন না সব অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে যাবে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, গণ-অভ্যুত্থানের পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছে বহু শীর্ষ সন্ত্রাসী, যারা বর্তমানে এসব অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা আবারও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে উঠছে। তাই প্রয়োজন নতুন কৌশলে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করা।
তথ্যসূত্র মানবজমিন