
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
মৃত্যুর পর কী ঘটে—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আগ্রহের শেষ নেই মানুষের। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু বিজ্ঞানীও এই রহস্য উদঘাটনে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার এক বাংলাদেশি নারী নিজেই জানালেন, কী ঘটেছিল তার সঙ্গে যখন তিনি আট মিনিট ধরে মৃত ছিলেন।
দ্য মিরর–এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই নারীকে ‘ক্লিনিকালি মৃত’ ঘোষণা করা হয়েছিল এবং আট মিনিট ধরে তার শরীরে কোনো প্রাণের চিহ্ন ছিল না। পরে প্রাণ ফিরে পেয়ে তিনি জানান, মৃত্যুর সেই সময়টুকুতে তার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল। তার দাবি—মৃত্যু আসলে কোনো শেষ নয়, বরং একটি বিভ্রমমাত্র।
৩৩ বছর বয়সী ব্রিয়ানা লাফার্টি, যিনি একটি বিরল ও প্রাণঘাতী স্নায়বিক রোগ—মায়োক্লোনাস ডিসটোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন, সে সময় হঠাৎ করেই তার শরীর সম্পূর্ণভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। চিকিৎসকরা তখন তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার জীবনে ঘটে যায় এমন এক অভিজ্ঞতা, যা তার চিন্তাভাবনার পুরো পরিবর্তন ঘটায়।
ডেইলি স্টার–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিয়ানা বলেন, “আমি হঠাৎ নিজেকে আমার শরীর থেকে আলাদা দেখতে পাই। আমার শরীর যেন আর আমার ছিল না। কিন্তু আমি সম্পূর্ণ সচেতন ও সজীব ছিলাম—মনে হচ্ছিল, তখনই যেন আমি সত্যিকার অর্থে ‘আমি’ ছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “সেখানে কোনো ব্যথা ছিল না। ছিল কেবল এক অনন্য শান্তি আর গভীর স্বচ্ছতা। তখনই উপলব্ধি করি, মানুষের জীবন আসলে খুবই ক্ষণস্থায়ী ও ভঙ্গুর। মনে হচ্ছিল, আমাদের উপরে এক সত্তা বা সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন, যিনি নিঃশর্ত ভালোবাসা দিয়ে আমাদের আগলে রাখেন।”
ব্রিয়ানা জানান, সময় যেন সেখানে এক অর্থহীন ধারণা হয়ে উঠেছিল—সব ঘটনা একসঙ্গে ঘটছিল, তবুও সেখানে ছিল এক নিখুঁত ছন্দ ও সিস্টেম। “আমি অনুভব করলাম যেন আমি সৃষ্টি শুরুর মুহূর্তে উপস্থিত আছি এবং বুঝতে পারলাম, আমাদের বিশ্ব আসলে গঠিত সংখ্যার এক অসীম ছন্দে।”
তার অভিজ্ঞতায় আরও উঠে আসে, এমন কিছু প্রাণীর উপস্থিতি, যাদের রূপ মানুষসুলভ ছিল না, কিন্তু তবুও তাদের খুব পরিচিত মনে হচ্ছিল।
ব্রিয়ানার ভাষায়, “এই অভিজ্ঞতা আমার জীবনের ভয়গুলোকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। যে সব কিছুর পেছনে আগে ছুটতাম, এখন আর সেগুলোর কোনো গুরুত্ব নেই। এখন আমার জীবনে আছে এক নতুন উদ্দেশ্য।”
তিনি আরও বলেন, “মৃত্যুর পরে চেতনা বিলীন হয় না, বরং অন্য এক রূপে রূপান্তর ঘটে। সেখানে চিন্তাগুলোই বাস্তব গঠনের উৎস। ভাবনাগুলো ধীরে ধীরে রূপ নেয় বাস্তবতায়, আর সেটাই আমাদের জন্য একটি দয়া।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার পর ব্রিয়ানাকে নতুন করে হাঁটতে ও কথা বলতে শিখতে হয়েছে। তার পিটুইটারি গ্রন্থি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাকে এক পরীক্ষামূলক মস্তিষ্ক অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
তার কথায়, “আমার পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষতি হয়েছিল। এজন্য আমি একটি পরীক্ষামূলক মস্তিষ্ক অস্ত্রোপচার করাই এবং তা এখন পর্যন্ত সফল হয়েছে। তবে আমি আর কোনো মৃত্যু-ঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতা চাই না, কারণ তা থেকে পুনরুদ্ধার করা সত্যিই কঠিন।”