ইসরায়েল — আমেরিকার ‘প্রক্সি সন্তান’ এবং ভবিষ্যতের মিয়ানমার পরিকল্পনা

বিশেষ বিশ্লেষণ: ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে প্যালেস্টাইন বিভাজনের রেজুলেশন পাস হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক কৌশল অত্যন্ত স্পষ্ট।

স্বাধীনতা ঘোষণা হওয়া মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়, যা এক প্রকার ‘স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান’ হিসেবে বিবেচিত হয় (United Nations, 1947; Truman Library Archives)। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ‘Major non-NATO ally’ ঘোষণা করে এই সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে (U.S. Department of State, 1987)।

১৯৪৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা হিসাবে প্রায় $৩১০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে বছরে $৩.৩ বিলিয়ন সামরিক সহায়তা এবং বিশেষ করে Iron Dome প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য $৫০০ মিলিয়ন বরাদ্দ রয়েছে।

২০২২ সালে শুধু Iron Dome-এর জন্যই বরাদ্দ ছিল $১.৫ বিলিয়ন (Congressional Research Service, 2022; U.S. House Appropriations, 2022)।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংঘাত, যেমন সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবানন এবং ইরানের সঙ্গে উত্তেজনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ইসরায়েলকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করার মাধ্যমে প্রমাণিত। Guardian, Reuters, এবং New York Post-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে যে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করেছে।

এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, ইসরায়েল একটি ‘প্রক্সি’ বা কৌশলগত অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ (The Guardian, 2024; New York Post, 2023; Reuters, 2022)।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক কৌশল এক অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে, যেখানে সামরিক শাসন, জাতিগত দ্বন্দ্ব ও মানবাধিকার ইস্যু রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন রাষ্ট্র এই সংকটকে ‘মানবিক হস্তক্ষেপের’ জন্য একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে (Human Rights Watch Reports, 2017-2023; UNHRC Myanmar Briefs)।

এই মডেল—যেখানে কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়—মধ্যপ্রাচ্যে সফলতার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রয়োগের সম্ভাবনা প্রবল।

মিয়ানমারের রাখাইন সংকট, রোহিঙ্গাদের অবস্থান ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অবস্থা আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতে ‘নতুন ইসরায়েল’ বা ‘কৌশলগত ঘাঁটি’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

সংক্ষেপে, ইসরায়েল একটি নির্মিত কৌশলগত ঘাঁটি, যা যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যের অংশ। ভবিষ্যতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে মিয়ানমারে, একই কৌশল প্রয়োগ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমুখী নীতি ও শক্তি প্রয়োগের কৌশল ছাড়া আজকের আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও সংঘাত বোঝা কঠিন।


তথ্যসূত্র:

United Nations Resolution 181 (1947)

Truman Presidential Library Archives

U.S. Department of State (Major non-NATO ally list, 1987)

Congressional Research Service Reports (2022)

U.S. House of Representatives Appropriations (2022)

Guardian (2024), New York Post (2023), Reuters (2022)

Human Rights Watch Reports (2017–2023)

United Nations Human Rights Council (Myanmar Briefs)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *