
নারায়ণগঞ্জে ৫ আগস্টের পর বিএনপির দুই পক্ষের অটোস্ট্যান্ড দখল ও রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষে নিহত হন দু’জন, বন্ধুত্ব ভেঙে তৈরি হয় রক্তক্ষয়ী শত্রুতা।
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় একটি অটোস্ট্যান্ড দখল ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকে ঘিরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় প্রাক্তন বন্ধুরা হয়ে যান চরম প্রতিপক্ষ। নিহতদের একজন বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান (৩৮) এবং অন্যজন রনি গ্রুপের সদস্য পারভেজের বাবা আব্দুল কুদ্দুস (৬০), যিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন।
গত শনিবার (২১ জুন) রাতে সংঘটিত এ ঘটনায় পুরো এলাকা থমথমে হয়ে ওঠে। রোববার (২২ জুন) বিকেলে শাহী মসজিদ ও হাফেজীবাগ এলাকায় সরেজমিনে গেলে এমন নানা তথ্য উঠে আসে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে বিএনপির দুই গ্রুপ—একটি হান্নান সরকারের অনুসারী বাবু-মেহেদী গ্রুপ এবং অন্যটি আবুল কাওসার আশার অনুসারী রনি-জাফর গ্রুপ—এর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলছে। ঘটনার সূত্রপাত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মাধ্যমে এলাকার নিয়ন্ত্রণ ও স্ট্যান্ড দখলের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে।
শনিবার রাতে বাবু-মেহেদী গ্রুপের লোকজন কুদ্দুসকে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে রনি-জাফর গ্রুপ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে রাত দেড়টার দিকে রনি-জাফর গ্রুপের অন্তত ৫০-৬০ জন সদস্য সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব মাঠ সংলগ্ন এলাকায় মেহেদী হাসানকে দেখে হামলা চালায়। পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মেহেদীকে।
নিহত কুদ্দুসের মেয়ের জামাতা মিনার হোসেন জানান, পারভেজ প্রতিবাদী স্বভাবের হওয়ায় এলাকাবাসীর হয়ে কথা বলত। সেই কারণে তার সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়েছিল। হয়তো পারভেজকে না পেয়ে প্রতিশোধ নিতে সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারের নির্দেশে বাবু ও তার সহযোগীরা কুদ্দুসকে কুপিয়ে হত্যা করে।
অপরদিকে, মেহেদীর ভাই খালিদ হাসান জানান, রনি, জাফর, রায়হানসহ অনেকে এলাকায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করতো। কিছুদিন আগে মেহেদী এক ঘটনায় তাদের বিচার করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ভাইয়ের উপর হামলা চালায়। ঘটনার সময় তিনি মেহেদীকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছিলেন।
বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মোশাররফ হোসেন বলেন, মেহেদী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। রনি ও মেহেদী একসময় একসাথে রাজনীতি করলেও রনি মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় তাদের সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়।
এদিকে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। তদন্ত চলছে। পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বলেন, হান্নান গ্রুপের হাতে রনি গ্রুপের একজন নিহত হওয়ার পর উত্তেজনায় রনি গ্রুপ মেহেদীকে হত্যা করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে এবং তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুরো এলাকাজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
✅ অন্য পত্রিকায় প্রকাশিত হেডলাইন:
বাংলা ট্রিবিউন: “৫ আগস্টের পর ক্ষমতার বিরোধে দুই বন্ধু হয়ে গেলেন শত্রু, ঘটে গেলো জোড়া খুন”
Daily Inqilab: “বন্দরে বিএনপির দুইপক্ষের বিরোধে এক রাতে দুই খুন”
Kalbela: “বিএনপির দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় ২ খুন”
Dhaka Post: “নারায়ণগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধে এক রাতে দুই খুন”
NewsG24: “নারায়ণগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এক রাতে ২ খুন”