
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় সরকারি প্রকল্পে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দায়িত্বহীন সদস্যদের ‘চুপ রাখতে’ ইউএনও নিজেই দিয়েছেন ‘উপহারের খামে’ টাকা—অভিযোগ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের।
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও দয়ারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হা‑মীম তাবাসসুম প্রভার বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউপি সদস্যদের পাশ কাটিয়ে নিজের পছন্দের লোক দিয়ে কাজ করিয়ে ‘মুখ বন্ধ রাখতে’ ইউপি সদস্যদের টাকার খাম ‘উপহার’ হিসেবে দিয়েছেন তিনি।
সরকারি বিধি অনুযায়ী টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের অর্থ প্রকল্প সভাপতির তত্ত্বাবধানে ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউএনও নিজের মনোনীত ব্যক্তিদের দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করান। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে অর্থ ব্যয় পর্যন্ত সমস্ত কার্যক্রমে স্বচ্ছতার অভাব দেখা দেয়।
বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দয়ারামপুর ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারের তিনটি পর্যায়ে টিআরের ১৪টি প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮৭ টাকা। এছাড়াও কাবিটার ১১টি প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮২ টাকা। কাবিখার তিনটি প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ১৬.৬৮ মেট্রিক টন চাল এবং অপর তিনটিতে ১৮.০৬ মেট্রিক টন গম।
৪ নম্বর দয়ারামপুর ইউনিয়নের একাধিক ইউপি সদস্য অভিযোগ করেন, প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে তাদের নাম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সব কাজ পরিচালনা করেন ইউএনও নিজে। এমনকি তাদের স্বাক্ষর নিয়েই ইউএনও অফিস থেকে অর্থ উত্তোলন করা হয়। প্রকল্পে কোনও দায়িত্ব না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানান, “আমরা তো শুধু নামে সভাপতি। প্রকল্প বাস্তবায়ন, কেনাকাটা সবই ইউএনও স্যার তার লোক দিয়ে করছেন। ঈদের আগে স্যার কাজ শেষ করে আমাদের হাতে খামে টাকা দিয়েছেন। আমার খামে ছিল ১৫ হাজার টাকা। যাদের প্রকল্প বেশি, তাদের টাকাও বেশি।”
এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইউপি সদস্য ও তিনটি প্রকল্পের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ঈদের আগে ইউএনও কিছু টাকা দিয়েছেন। পরে পুরো হিসাব মিটলে আরও দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাগাতিপাড়া উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি মাহাবুব হোসেন। তিনি বলেন, “প্রশাসনের কর্মকর্তা হয়ে এমন অনিয়ম একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আমরা দুদক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিষয়টি জানাব। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক, এটাই দাবি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ও ইউনিয়ন প্রশাসক হা‑মীম তাবাসসুম প্রভা বলেন, “মেম্বাররা যদি কাজ না করেন, তাহলে সভাপতি হিসেবে স্বাক্ষর করেন কেন? যদি অভিযোগ থাকে, সেটা আমাকে বলবে।” তবে, ইউপি সদস্যদের টাকার খাম ‘উপহার’ দেওয়ার প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
📰 অন্য পত্রিকার হেডলাইন (যদি পাওয়া যায়):
Channel 24: “ইউএনও’র টাকার খামের নেপথ্যে যা জানা গেল”
**যায়যায়দিন:**
*“‘মুখ বন্ধ’ রাখতে টাকার খাম ‘উপহার’ দিলেন ইউএনও”*
*কালবেলা:**
*“নির্বাচনী বরাদ্দের টাকা লোপাটের অভিযোগ ইউএনওর বিরুদ্ধে”*