
রিমান্ড শুনানিতে আদালতে সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি, এমনকি ’৭৩-এর নির্বাচনেও ছিল অনিয়ম।
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
রিমান্ড শুনানিতে নিজেকে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘‘জাস্টিফাই করতে না দিলে রিভলবার দিয়ে আমাকে মেরে ফেলুন।’’
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে রিমান্ড শুনানি হয়। এতে আসামি উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘‘মাননীয় আদালত, আপনি ন্যায়বিচার করবেন। আমি স্বীকার করছি, রাজনৈতিক দলের অধীনে কোনো নির্বাচনই বাংলাদেশে সুষ্ঠু হয়নি। সব নির্বাচনই বিতর্কিত। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্বাচনে তুলনামূলক স্বচ্ছতা ছিল।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘দেশ স্বাধীন হওয়ার তিন মাস পর ’৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন হয় এবং ’৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসনে জয় পায়। সেই নির্বাচনও সুষ্ঠু ছিল না। মানুষকে রাস্তায় আটকে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। ক্ষমতার লোভ এমন ছিল, শেখ মুজিবও তা সামলাতে পারেননি। আবার ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে। পরে তারাই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সংবিধান সংশোধন করে।’’
তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘এক হাজার বছরেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, যদি না কিছু মৌলিক সংস্কার আনা হয়।’’
বিচারক তখন বলেন, ‘‘আপনি তো সংবিধানের শপথ নিয়েছেন। আপনি কি মনে করেন নির্বাচন প্রহসনমূলক হয়েছে?’’
জবাবে হাবিবুল বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি মনে করি নির্বাচন প্রহসনমূলক ছিল। কিন্তু এর জন্য আমার কোনো দায় নেই। রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন ছিল যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা কঠিন ছিল।’’
বিচারক তখন প্রশ্ন করেন, ‘‘তাহলে আপনি পদত্যাগ করলেন না কেন?’’
উত্তরে হাবিবুল বলেন, ‘‘ওই সময় পদত্যাগ করার সুযোগ ছিল না।’’
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে হাবিবুল বলেন, ‘‘তখন গভীর রাতে ভোট হয়েছে। আমি নিজেও একটি স্থানে দায়িত্বে ছিলাম। ভোটের আগের দিন ঘুমিয়ে ছিলাম। পরে জানতে পারি রাতেই ভোট হয়ে গেছে। আমি কিছুই জানতাম না।’’
এ সময় ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘‘নিজেকে সাধু প্রমাণ করতে অন্যের দোষ দিয়ে লাভ নেই। অন্যরা কী করেছে সেটা না বলে আপনি কী করেছেন, সেটা বলুন।’’
পিপি আরও বলেন, ‘‘একজন আসামি এত কথা বললে অন্য আসামিরা কখন বলবে? তিনি নিজেকে জাস্টিফাই করতে চাচ্ছেন, সেটার সুযোগ নেই।’’
জবাবে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘‘জাস্টিফাই করতে না দিলে একটা রিভলবার নিয়ে আমাকে মেরে ফেলুন।’’
এই বক্তব্যের পর এজলাসে আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে শুনানি শেষে আদালত হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ২৩ জুন নুরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। এরপর বুধবার রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
📰 অন্য পত্রিকার হেডলাইন
শেয়ার নিউজ২৪: ক্ষমতার লোভ শেখ মুজিবও সামলাতে পারেননি
আমাদের বার্তা: ক্ষমতার লোভে শেখ মুজিবও কারচুপি করেছিলেন, আদালতে হাবিবুল
বিডি টুডে: শেখ মুজিবও ক্ষমতার লোভ সামলাতে পারেননি, আদালতে হাবিবুল
এমটিনিউজ২৪: ক্ষমতার লোভ শেখ মুজিবও সামলাতে পারেননি: আদালতকে সাবেক সিইসি
আপন দেশ: অকপটে সব দোষ স্বীকার করলেন সাবেক সিইসি আউয়াল