অস্ত্রসহ এয়ারপোর্টে ঢুকায় আওয়ামী লীগ নেতার জেল হয়েছিল, একই ঘটনার অভিযোগ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে

সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশের অস্ত্র আইন ভঙ্গ করে এয়ারপোর্টে অস্ত্রের ম্যাগাজিন নেওয়া গুরুতর অপরাধ হলেও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দাবি করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ মরক্কো যাওয়ার সময় অস্ত্রের ম্যাগাজিনসহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ করেছেন। তিনি বলেন, বিমানবন্দরে অস্ত্রসহ প্রবেশ করাটা বাংলাদেশের অস্ত্র আইনে একটি “ক্রিমিনাল অফেন্স” বা ফৌজদারি অপরাধ। এটি অত্যন্ত ভয়াবহ একটি অপরাধ, বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মাসুদ কামাল আরও বলেন, “আপনি যদি এমন কাজ করেন, তাহলে আপনাকে জেলে যেতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এক নেতা অস্ত্রসহ এয়ারপোর্টে ঢোকার কারণে জেলে গিয়েছিলেন। সেই সময়ও আইনটি প্রয়োগ হয়েছিল, এমনকি স্বৈরাচারী আমলেও এই আইন কার্যকর ছিল।”

তিনি বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে আইন সবার জন্য সমান। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, “আসিফ মাহমুদের ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি অস্ত্রটি তার প্রটোকল অফিসারের কাছে দিয়ে মরক্কো চলে গেছেন। কেউ তাকে থামায়নি, কেউ জিজ্ঞাসাও করেনি যে তিনি বেআইনি কিছু করেছেন কি না। কোনো মুচলেকাও নেওয়া হয়নি। যেন কিছুই ঘটেনি।”

বাংলাদেশের অস্ত্র আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, “আইন অনুযায়ী ৩০ থেকে ৭০ বছর বয়সী নাগরিকরা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। আর ছোট অস্ত্রের ক্ষেত্রে লাইসেন্স পেতে হলে টানা তিন বছর ৩ লাখ টাকা করে আয়কর দিতে হয়। তারপর জেলা প্রশাসন বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেয়।”

মাসুদ কামাল প্রশ্ন তোলেন, “আসিফ মাহমুদের বয়স ২৬। কিছুদিন আগেও তিনি ছিলেন বেকার, পড়ালেখাও শেষ করেননি। তাহলে তার এই আয়ের উৎস কী? ৩ লাখ টাকা করে আয়কর দেওয়ার সামর্থ্য তার আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।”

তিনি বলেন, “আসিফ মাহমুদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অস্ত্র আইনের একটি অধ্যায়ের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে— ‘আসুন জানি-শিখি, তারপর মন্তব্য করি। ডিফেম করাই যদি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে অজ্ঞ থাকুন।’ এই বক্তব্যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেয়েছে। যারা তাকে সমালোচনা করেছেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল যদি সত্য উন্মোচন, তাহলে তাদের অজ্ঞ-মূর্খ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। নিজেকে মহাজ্ঞানী হিসেবে তুলে ধরেছেন।”

মাসুদ কামাল আরও বলেন, “যেহেতু তিনি মন্ত্রীর সমমর্যাদার একজন ব্যক্তি, তাই তার ক্ষেত্রে ৩০ বছরের বয়স ও আয়কর সংক্রান্ত শর্ত প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কিন্তু অস্ত্র আইনে স্পষ্ট বলা আছে, বিদেশে গেলে সেই অস্ত্র সংশ্লিষ্ট জেলা মালখানা, থানা অথবা সেফ কিপিং লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানে জমা রাখতে হবে।”

তিনি বলেন, “আসিফ মাহমুদ নিজেই বলেছেন— ‘প্যাকিং করার সময় একটি ম্যাগাজিন বাসায় রেখে এলেও, ভুলবশত অন্য একটি ম্যাগাজিন ব্যাগে থেকে যায়। স্ক্যান করার পর সেটি প্রোটোকল অফিসারের হাতে তুলে দেই।’”

এই বক্তব্যের ভিত্তিতে মাসুদ কামাল বলেন, “আপনি যদি বলেন বাসায় অস্ত্র রেখে এসেছেন, সেটাও বেআইনি। ৩৩ এর খ ধারা অনুযায়ী এটি বৈধ নয়। আপনি অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন অথচ আইন জানেন না—এটি নিজেই প্রমাণ করে আপনি অস্ত্র রাখার যোগ্য নন। এটি একটি অপরাধ, একটি ক্রিমিনাল অফেন্স।”


অন্য পত্রিকার হেডলাইন:

প্রথম আলো: ভুলবশত একটি ম্যাগাজিন ব্যাগে ছিল: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

বিডিনিউজ২৪: ব্যাগে ম্যাগাজিন, উপদেষ্টা আসিফ বললেন ‘লাইসেন্স করা’ অস্ত্রের

কালের কণ্ঠ: বিমানবন্দরে আসিফের ব্যাগে অ্যামোনেশনসহ ম্যাগাজিন, ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: বিমানবন্দরে ব্যাগে মিলল অস্ত্রের ম্যাগাজিন, যা বললেন আসিফ মাহমুদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *