
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত ১৪১টি মব হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫২ জন এবং আহত হয়েছেন ২৮৯ জন, যা উদ্বেগজনক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশে মব হামলার সংখ্যা ১৪১টি পৌঁছেছে, যেখানে ৫২ জন নিহত এবং ২৮৯ জন আহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়কালে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় দিনে-দুপুরে একটি আবাসিক হোটেল দখলের চেষ্টায় মব তৈরি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়। মে মাসে ধানমন্ডিতে একটি বাড়িতে ঢুকে স্বৈরাচার সরকারের দোসর রয়েছে দাবি করে একদল তরুণ হামলার চেষ্টা করে; পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
২২ জুন উত্তরায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদাকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনার ঘটনায় মব সন্ত্রাস আবারও সামনে আসে।
সরকার মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও এ ধরনের নৈরাজ্য থামছে না। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাঁচ আগস্টের পর বেশিরভাগ মব হামলার ঘটনাই পরিকল্পিত। নিরাপত্তা শঙ্কায় পুলিশ বাহিনী নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ২১টি মব হামলায় ১২ জন নিহত ও ৩৮ জন আহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে নিহত ৮ ও আহত ৩৪ জন। মার্চে ৩৯টি ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও ৯৬ জন আহত। এপ্রিলে ২৭টি মব হামলায় ১০ জন নিহত ও ৫৩ জন আহত। মে মাসে ৩৬টি ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ৬৮ জন আহত হয়েছেন।
মব জাস্টিসের নামে হামলার ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সরকার এক বিবৃতিতে মবে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও মব সন্ত্রাস থামছে না।
বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, “যারা মবের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক, আমরা তা প্রত্যাশা করি। যদি কেউ এমন ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে, তাহলে তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পুলিশ সদস্যদের মাঝেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা কাটেনি এখনও। তাই বাহিনী পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, “এই পরিকল্পিত আক্রমণকে মব দিয়ে কাটিয়ে ওঠা যাবে না। বিবৃতির দেশ বাংলাদেশ না, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”
মব সন্ত্রাসকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ একাধিক মানবাধিকার সংস্থা। তাদের মতে, এ ক্ষেত্রে সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।
অন্য পত্রিকার হেডলাইন:
প্রথম আলো: ৬ মাসে পুলিশের ওপর ২২৫ হামলা, ‘মব’ নিয়ে উদ্বেগ
কালের কণ্ঠ: মব-সন্ত্রাসে ৯ মাসে নিহত ১৩১
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: বেপরোয়া ‘মব সন্ত্রাস’—দশ মাসে নিহত ১৭৪, আহত ৩৬৩ জন
আমার সংবাদ: কঠোর বার্তায়ও থামছে না ‘মব’