
বগুড়ার শাজাহানপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে গুলি রেখে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। গণপিটুনির পর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর শাহ্পাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। বগুড়া পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সভাপতি আবদুল বাকীর বাড়িতে গুলি রেখে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল রুহুল আমিন বর্তমানে পুলিশ লাইনসে কর্মরত ছিলেন।
ঘটনার সময় বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতা তাকে ধরে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। বর্তমানে তিনি পুলিশ প্রহরায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
আওয়ামী লীগ নেতার মেয়ে অ্যাডভোকেট শাপলা খাতুন শাজাহানপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “অপরাধ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেত, কিন্তু গণপিটুনি দেওয়া অন্যায়।”
অ্যাডভোকেট শাপলা খাতুন ও এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, আগের এক ঘটনায় কনস্টেবল রুহুল আমিনকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছিল। প্রায় এক সপ্তাহ আগে তিনি ডিবি পুলিশের পরিচয়ে আবদুল বাকীর খোঁজে তার বাড়িতে যান। আবদুল বাকী না থাকায় রুহুল আমিন খরচের অজুহাতে ৫০০ টাকা নিয়ে চলে যান।
পুনরায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তিনি ওই বাড়িতে উপস্থিত হন। তখন বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য ছিল না। বেলা দেড়টার দিকে আবদুল বাকীর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন সবুজ (৩২) বাড়িতে ফিরলে কনস্টেবল রুহুল আমিন তাকে পাশের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে একটি টিনের বাক্স খুলতে বলেন। সেখানে পাঁচ রাউন্ড শটগানের গুলি পাওয়া যায়।
এরপর রুহুল আমিন আরও একটি ব্যাগ বের করে ১৫ রাউন্ড গুলি দেখিয়ে বলেন, এসব দিয়ে মামলা দেওয়া হবে। তিনি দাবি করেন, গত ৫ আগস্ট সদর থানা থেকে অস্ত্র লুট হয়েছিল এবং ওই অস্ত্রগুলোর কিছু এখানেই রয়েছে।
ঘটনার সময় সবুজ তার বোন অ্যাডভোকেট শাপলা খাতুনকে ফোন দিলে রুহুল আমিন নিজেই তার সঙ্গে কথা বলেন। শাপলা জানান, তার ভাই ব্রেন টিউমারের রোগী, তাকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। জবাবে রুহুল আমিন বলেন, এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দিলে সবুজকে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরে সেই পরিমাণ টাকার ব্যবস্থা না হওয়ায় তিনি বলেন, এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিলেও হবে।
পরিস্থিতির অবনতি দেখে অ্যাডভোকেট শাপলা খাতুন ও তার স্বামী শাহাদত আলম কোর্ট থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর আশপাশের মানুষ জড়ো হয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে রুহুল আমিনকে ধরে ফেলেন এবং গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন।
অ্যাডভোকেট শাপলা খাতুন এরপর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে কনস্টেবল রুহুল আমিনকে উদ্ধার করেন। পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
শাজাহানপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, আগের অভিযোগের ভিত্তিতে কনস্টেবল রুহুল আমিন পুলিশ লাইনসে যুক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা নতুন অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, “কনস্টেবল রুহুল আমিন রাতে ডিউটি করে অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন, তবে সরকারি গুলিগুলো হয়তো জমা দেননি। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।”
অন্যান্য পত্রিকার হেডলাইন:
- প্রথম আলো: বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে গুলি রেখে চাঁদা দাবি, পুলিশ সদস্য আটক
জনকণ্ঠ: শাজাহানপুরে চাঁদা নিতে গিয়ে জনতার হাতে আটক পুলিশ সদস্য
রূপালী বাংলাদেশ: আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজি, পুলিশ কনস্টেবল আটক
নর্থ ক্যাপিটাল নিউজ: বগুড়ায় চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবল রুহুল আমিন আটক
নাগরিক ভাবনা: শাজাহানপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবল আটক
BD24Live: বগুড়ায় চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবল আটক