রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে লেখা ‘শেখ হাসিনা আসবে’ ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান

বাংলাদেশের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ দিবসের আগের রাতে ভবনের দেয়ালে লেখা হয় ‘শেখ হাসিনা আসবে’ ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, প্রতিবাদে উত্তাল হয় ক্যাম্পাস।

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

সহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জুলাই শহীদ দিবসের আগের রাতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে স্প্রে করে বড় অক্ষরে লেখা হয় ‘শেখ হাসিনা আসবে’ ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সকালে শিক্ষার্থীদের চোখে পড়ে এসব লাল রঙের স্প্রেতে লেখা স্লোগান। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, যাত্রী ছাউনি এবং ভবনের দেয়ালজুড়ে স্পষ্ট দেখা যায় লেখাগুলো।

তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্লোগানগুলো মুছে ফেলে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় ছাত্রদল।

বুধবার রাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে। ইতোমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজে একজনকে দেয়ালে লিখতে দেখা গেলেও এখনো তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জুলাই আন্দোলনকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর উঠেছে নানা প্রশ্ন। কারণ, ক্যাম্পাসে রাতের বেলা প্রবেশাধিকার সীমিত এবং নিরাপত্তা কর্মীরাও দায়িত্বে ছিলেন। তবুও কে বা কারা দেয়ালে এই লেখা করেছে— তা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

জুলাই আন্দোলনের কর্মী ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পাঁচ আগস্টের পর হলে সংস্কার না হওয়া এবং প্রশাসনের অবহেলার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। তাদের দাবি, ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী হলে থেকে ছদ্মবেশে এসব কাজ করছেন।

এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন এবং আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী শাহরিয়ার সোহাগ।

শামসুর রহমান সুমন তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “৫ আগস্টের পর বেরোবির হলে সংস্কার হয়নি, আর সেই গাফিলতির ফল আজকের ঘটনা। আজও ছাত্রলীগের প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। যে বা যারাই এই ধৃষ্টতা দেখিয়েছে! অপেক্ষা!”

অন্যদিকে শাহরিয়ার সোহাগ ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, “যার ন্যূনতম ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, বেরোবির কোনো হলে সে থাকতে পারবে না! ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।”

তাদের এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে তাদের পোস্ট হুবহু কপি করে নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করেন, যা আন্দোলনকারীদের মধ্যে প্রবল সাড়া ফেলে।

সুমন আরও বলেন, “আবু সাঈদের শাহাদত দিবসে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও ছাত্রলীগ এমন ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “ছাত্রলীগের সুপারিশে হলে উঠা কর্মীদের কেউ কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তাদের সিট বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নতুনভাবে সিট বরাদ্দ দিতে হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির সদস্যসচিব রহমত আলী বলেন, “আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড দিবসে এমন জঘন্য ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষার্থীরা এতে ক্ষুব্ধ।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাই আন্দোলনের সময় যারা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ছিল, এখনো কেউ কেউ গোপনে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। এখনই ঘোষণা দিতে হবে, তারা জুলাই আন্দোলনের পক্ষে নাকি ছাত্রলীগের।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শওকাত আলী জানান, “তদন্ত কমিটি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। একজনকে লেখতে দেখা গেছে। তাকে শনাক্ত করলেই বোঝা যাবে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাকি বহিরাগত। আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *