
বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত এনসিপি কর্মী সোহেলের মৃত্যুর পর তাঁর মায়ের হৃদয়বিদারক আহাজারি শোকাহত করে পুরো এলাকাবাসীকে, বিচার দাবি পরিবারের।
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
‘ওরে বাবারে। ওরে তোমরা কেন মাইরা ফেলাইলা। তোমাগোও তো মা আছে, মা কইয়া ডাকো না! আমারে মা কওয়ার আর কেউ নাই।’
এই হৃদয়বিদারক বিলাপ করতে করতে জ্ঞান হারান গোপালগঞ্জে নিহত সোহেল মোল্লার মা লাইলি বেগম।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপালগঞ্জ শহরের পূর্ব মিয়াপাড়ায় সোহেল মোল্লার ভাড়া বাসায় এমন দৃশ্য দেখা যায়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষে নিহত চারজনের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। সোহেল ছিলেন তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।
সোহেলের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। চৌরঙ্গীর কেরামত উদ্দিন প্লাজায় একটি মুঠোফোনসামগ্রীর দোকান চালাতেন তিনি।
লাইলি বেগম জ্ঞান ফিরে পেয়ে আবারও বলতে থাকেন, ‘তোমরা কি আমার বাবারে আইনে দিতে পারবা? কী দোষ করছিল আমার বাবা। আমার বাবাকে কেউ কোনো দিন খারাপ কইতে পারে নাই। ও তো কোনো দল করত না। ওর কেন এমন হবে!’
পূর্ব মিয়াপাড়ার চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্ত্রী, বাবা-মা এবং দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন সোহেল মোল্লা।
তার বাবা ষাটোর্ধ্ব ইদ্রিস আলী মোল্লা শোকে স্তব্ধ। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ছেলে কী করেছে? কী অপরাধ ছিল তার? কেন তাকে গুলি করে মারা হলো? আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
ঘটনার বিষয়ে সোহেলের মামা জাহিদুল ইসলাম তালুকদার জানান, বুধবার বিকেলে তিনি মুঠোফোনে খবর পান, তাঁর ভাগনে সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
তিনি আরও বলেন, এখনো সোহেলের ময়নাতদন্ত হয়নি এবং হাসপাতাল থেকে কোনো মৃত্যুসনদও দেওয়া হয়নি।
স্বজনেরা জানান, নিহত সোহেলের লাশ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখান থেকে রাতেই গোপালগঞ্জ শহরের বাসার নিচে রাখা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পরে পরিবারের সদস্যরা আবার শহরের বাসায় ফিরে আসেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সোহেল মোল্লা প্রতিদিনের মতো গতকালও দোকানে গিয়েছিলেন। দুপুরে সংঘর্ষ শুরু হলে তিনি মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করার সময় গুলিতে নিহত হন।
সোহেলের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে—একজন চার বছরের, অন্যজন দুই বছরের।
তাঁর স্ত্রী নিশি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘কী অপরাধে আমার সন্তানদের এতিম করা হলো? আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করত না। সে শুধু ব্যবসা আর পরিবার নিয়ে থাকত। প্রতিদিন বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মাকে জড়িয়ে ধরত। আজ আর কোনো দিনই সে মাকে জড়িয়ে ধরবে না।’
সোহেলের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময়ও কাঁদছিলেন লাইলি বেগম। তিনি বলছিলেন, ‘আমাগো বাড়ি গোপালগঞ্জ হইতে পারে। আমরা তো কোনো রাজনীতি করি না, বাবা। তার কেন এই হইলো?’