একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে:জামায়াতের আমির

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশে অসুস্থ হলেও বক্তব্য থামাননি জামায়াত আমির শফিকুর রহমান। ফ্যাসিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ের ডাক দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে সভাপতির সমাপনী বক্তব্য দেওয়ার সময় দলের আমির শফিকুর রহমান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ পড়ে যান। নেতা-কর্মীদের সহায়তায় উঠে দাঁড়ালেও কিছুক্ষণ পর আবারও অসুস্থ হয়ে বসে পড়েন। এরপর মঞ্চে বসেই বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

শনিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। এতে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও বক্তব্য দেন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার এবং আহত ব্যক্তিদের অনেকেও বক্তব্যে অংশ নেন।

বিকেল পাঁচটার পর সমাপনী বক্তব্য দিতে দাঁড়ান জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। জামায়াত যে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়বে, তার প্রথম প্রমাণ হচ্ছে…।’ এই কথার মাঝেই হঠাৎ তিনি পড়ে যান।

নেতারা তাকে উঠিয়ে দাঁড় করান। এরপর তিনি বলেন, ‘সবাই নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান নিন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি, আবার আপনাদের সামনে দাঁড়াতে পেরেছি। আমি বলেছিলাম, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ আমরা সবাই মিলে গড়ব। আমরা কথা দিচ্ছি, আল্লাহর রহমত ও জনগণের ভালোবাসায় জামায়াত যদি সরকার গঠন করে, তাহলে…।’ এরপর তিনি আবার বসে পড়েন।

মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, গরমের কারণে তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসকেরা তাকে বিশ্রামের পরামর্শ দেন।

তবুও নিচে বসেই আবার বক্তব্য শুরু করেন জামায়াত আমির। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, যত দিন হায়াত আছে, তত দিন মানুষের পক্ষে লড়ব, ইনশা আল্লাহ। এ লড়াই থামবে না। বাংলার মানুষের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত চলবে। যদি আমরা দেশের সেবা করার সুযোগ পাই, তাহলে আমরা শাসক নয়, সেবক হব ইনশা আল্লাহ।’

তিনি ঘোষণা দেন, জামায়াত থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সরকারি কোনো প্লট নেবেন না, করমুক্ত গাড়িও ব্যবহার করবেন না। তারা ব্যক্তিগতভাবে কোনো অর্থ লেনদেন করবেন না। বরাদ্দপ্রাপ্ত অর্থের কাজ শেষ হলে তা জনসমক্ষে তুলে ধরবেন।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি করব না। কাউকে চাঁদা দিতে দেব না, দুর্নীতিও সহ্য করব না। আমরা চাই এমন বাংলাদেশ, যেখানে স্বচ্ছতা থাকবে। তরুণদের বলছি, তোমরা একা নও, আমরা তোমাদের পাশে আছি।’

বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। শরীর সহযোগিতা না করলেও আজ আবার কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেন। আমার মৃত্যু এক সেকেন্ডও আগে-পিছে হবে না। যত সময় আল্লাহ দিয়েছেন, তত সময় কাজ করে যাব।’

বক্তব্য শেষে মঞ্চে জামায়াতের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে দাঁড়ান তিনি। তখন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়েছেন। আমিরেও অসুস্থ হয়েছিলেন, কিন্তু আল্লাহ তাঁকে আবার কথা বলার তাওফিক দিয়েছেন।’ এ সময় তাঁকে দুই পাশে ধরে ছিলেন দুই নেতা।

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর পদ্ধতি) নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। সারা দেশ থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশে অংশ নেন। মূল আয়োজন শুরু হয় দুপুর দুইটায় এবং আমিরের বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়।

জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশ শেষে আমির শফিকুর রহমানকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *