
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির মতে, এই সিদ্ধান্ত সরকারের ঘোষিত রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার উদ্যোগের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
সোমবার বাজেট ঘোষণার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে, যা অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধানের পরিপন্থী।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ সিদ্ধান্ত যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এটা পরিষ্কার যে, সরকার দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকে উপেক্ষা করেছে। একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, এই সিদ্ধান্ত রিয়েল এস্টেট খাতের প্রভাবশালী লবির কাছে নীতিগত আত্মসমর্পণ, যা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের এই লঙ্ঘন প্রকৃতপক্ষে সৎ উপার্জনকারীদের আবাসন খাতে প্রবেশের সুযোগ নষ্ট করছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতিকে উসকে দিচ্ছে এবং যারা পুরো বছর অপ্রদর্শিত আয় গোপন রাখে, তাদের জন্য বছরের শেষে সেই অর্থ বৈধ করার পথ খুলে দিচ্ছে। এমন সিদ্ধান্ত দেশের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত খাত, আবাসন খাতকে ঘিরে নেওয়া, যা আরও উদ্বেগজনক।
টিআইবি এই সুযোগ অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানায়। পাশাপাশি সংস্থাটি চায়— কালো টাকার উৎস খুঁজে বের করে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে, করব্যবস্থায় ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে এবং বাজেটের সংশোধিত সংস্করণে এই সুযোগ রদ করতে হবে।
তাদের মতে, সরকার যদি সত্যিকার অর্থে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিতে চায়, তাহলে কালো টাকা সাদা করার যাবতীয় পথ বন্ধ করতে হবে। অন্যথায়, সরকারের সুশাসনের প্রতিশ্রুতি ও দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমকে লোক দেখানো বলেই মনে করবে জনগণ।
এছাড়া, টিআইবি জানিয়েছে যে, সরকারের গঠিত দুদক সংস্কার কমিশনের অন্যতম সুপারিশ ছিল কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ চিরতরে বন্ধ করা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য ছিল। বাজেটে সরকারের বিপরীতমুখী অবস্থান গ্রহণ করা স্ববিরোধী ও সরকারকেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে বলে মন্তব্য করে টিআইবি।
সংস্থাটি আরও বলেছে, বাজেট বক্তৃতায় বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনার অনুপস্থিতি হতাশাজনক। অর্থ উপদেষ্টা এ বিষয়ে শুধু একটি বাক্যে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দায় শেষ করেছেন।
টিআইবি আরও মন্তব্য করেছে, বিদেশে অর্থপাচার করে নাগরিকত্ব ত্যাগকারীদের ওপর কর ও জরিমানার বিধান রাখা হলেও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বাজেটে কোনো পরিষ্কার দিকনির্দেশনা নেই। একইভাবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়েও কার্যকর কোনো কৌশল উল্লেখ করা হয়নি।