
নিউ ঢাকা টাইমস :ডেক্স রিপোর্ট
কাশ্মির ইস্যু, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ নানা বিষয় নিয়ে ভারতকে বিস্তৃত আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। তিনি সতর্ক করে বলেন, রাজনীতি ও কূটনৈতিক আলোচনাকে পাশ কাটিয়ে যদি যুদ্ধের পথে এগোনো হয়, তাহলে তা দুই দেশের জন্যই অসীম দুর্ভোগ বয়ে আনবে।
শেহবাজ শরিফ বলেন, “আমরা ভারতকে আহ্বান করছি বিস্তৃত সংলাপে অংশ নিতে। এই আলোচনায় কাশ্মিরসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন থাকবে এবং আলোচনার সফল সমাপ্তির পর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও সন্ত্রাস দমন নিয়ে যৌথ পদক্ষেপের দিকেও এগিয়ে যেতে পারি।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের জন্য সবচেয়ে বিপদাপন্ন দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান অন্যতম। এই সংকটের কারণে গত কয়েক দশকে ৯০ হাজার মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি ১৫ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছি।”
সম্প্রতি ভারতের সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জবাবে ‘অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুস’ চালায় পাকিস্তান। এই অভিযানের সাফল্য উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার ইসলামাবাদে ‘ইয়োম-ই-তাশাকুর’ বা ধন্যবাদজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির, এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমেদ বাবর, নৌপ্রধান অ্যাডমিরাল নাভিদ আশরাফ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা, কূটনীতিকরা, শহীদ পরিবারের সদস্য এবং খ্যাতনামা ক্রীড়া ও শোবিজ ব্যক্তিত্বরা।
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামের হামলার সূত্র ধরে শুরু হওয়া সাম্প্রতিক সংঘাতে পাকিস্তান বিজয়ী হয়েছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান যুদ্ধ নয়, শান্তিই চায়।
তিনি বলেন, “যুদ্ধে জয়লাভের পরও আমরা শান্তির পক্ষে। আমরা শত্রুদের শিক্ষা দিয়েছি এবং আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য এই অঞ্চলকে কঠোর পরিশ্রম, নিরলস প্রচেষ্টা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে উন্নত ও সমৃদ্ধ করা।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি এই অঞ্চলের দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে ১৬০ কোটির বেশি মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। এমনকি যুদ্ধের সূচনার ইতিহাসও হয়তো বলা সম্ভব হবে না।”
‘ইয়োম-ই-তাশাকুর’ উপলক্ষে ইসলামাবাদে শুক্রবার ভোরে ফজরের আজানের পর ৩১ রাউন্ড গান স্যালুট দেওয়া হয়। প্রাদেশিক রাজধানীগুলোতে ২১ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সব ভবনে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বড় শহরগুলোতে শোভাযাত্রা ও অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় একদল সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করে। নিহতরা সবাই পুরুষ এবং বেশিরভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
এই হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)’। তদন্তে উঠে এসেছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা এই হামলায় জড়িত।
এই ঘটনার পরপরই ভারত সিন্ধু নদের পানি বণ্টন চুক্তি বাতিলসহ বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
এই উত্তেজনার মধ্যেই গত ৭ মে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে। এতে পাকিস্তান দাবি করেছে ৫১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৩ জন সেনা সদস্য এবং বাকিরা বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন আরও ৭৮ জন।
জবাবে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুস’ শুরু করে। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী এই অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্য এবং ১৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
এই সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। গত ১০ মে শনিবার থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।