
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত মুখ ইউটিউবার এস এ সাব্বির এপ্রিল মাস থেকে কারাগারে রয়েছেন—এই তথ্যটি নিশ্চিত হয়েছে অনেক অনুসন্ধানের পর। জুন মাসের শুরুতে যখন নেট দুনিয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করে ‘সাব্বির কোথায়?’, তখন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বনানী থানা পুলিশ তাকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করেন, যার জন্য একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সেই মামলার ভিত্তিতেই তিনি এখন কারাগারে আছেন।
৫ এপ্রিল বনানী থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা ‘জননিরাপত্তা আইন’ ও ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন’-এ একটি মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান। তার ভাষায়, সাব্বিরের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে।
পুলিশ ও মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২৩ মার্চ মুনতাসির মামুন নামের একজন বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তিনি অভিযোগ করেন, এস এ সাব্বির উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ও রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছেন এবং জনমনে অস্থিরতা তৈরি করছেন।
সেই জিডিতে বলা হয়, “এস এ সাব্বির” নামের একটি ইউটিউব ও টিকটক চ্যানেল থেকে কিছু ভিডিও প্রকাশ করা হয়, যেখানে দাবি করা হয় যে বাদী মুনতাসির, মাবরুর রশিদ বান্না ও মাহদি আমিন ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সেনাপ্রধানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন। এ পরিকল্পনায় মেজর খালেদ মোশারাফের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এনে বলা হয়, ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে তাকে অবরুদ্ধ করে হত্যা করা হবে।
ভিডিওগুলোতে আরও বলা হয়, উল্লিখিত তিন ব্যক্তি জঙ্গি অর্থায়নে বাংলাদেশ ধ্বংসের পরিকল্পনা করছেন এবং এই প্রচেষ্টায় কিছু পরিচিত সেলিব্রেটি ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারও যুক্ত।
এসব অভিযোগ যাচাই করতে গিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং ৪ এপ্রিল রাতে রাজধানীর মুগদা এলাকায় একটি বাসা থেকে এস এ সাব্বিরকে গ্রেপ্তার করে। অভিযানে পুলিশ তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোফোন, একটি ক্যামেরা, একটি মেমোরি কার্ড ও দুটি পাসপোর্ট জব্দ করে।
পরদিন, ৫ এপ্রিল বনানী থানার এসআই ইমদাদুল হক ‘জননিরাপত্তা আইন’ এবং ‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন ২০১৩’-এর ৬(১)(ক)(ঈ)/১২ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইউটিউব, ফেসবুক ও টিকটকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয়, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্য ছিল। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, এই কার্যক্রমে অজ্ঞাতনামা আরও কিছু ব্যক্তি সাব্বিরের সঙ্গে জড়িত ছিল।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাব্বির কিছু অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি ভিডিওগুলোর মাধ্যমে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে মানুষের মধ্যে ভীতি ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন।
গ্রেপ্তারের পরদিন, ৫ এপ্রিল পুলিশ আদালতের কাছে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে, যদিও আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃত সাব্বির বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার উত্তর ঘটিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি হেলাল সরকারের ছেলে এবং পরিবারের একমাত্র সন্তান। তার বাবা স্থানীয় উল্লাহ বাজারে একটি ছোট লেপ-তোষকের দোকান পরিচালনা করেন।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে সাব্বির তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখেন। এ বিষয়ে সাঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মশিউর রহমান জানান, সাব্বির দীর্ঘদিন ধরে পরিবার থেকে আলাদা থাকতেন এবং প্রায় দুই মাস আগে ঢাকায় গ্রেপ্তার হন। তিনি আরও জানান, সাব্বিরের পরিবার তার কোনো খোঁজ জানতেন না।