বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫% শুল্ক, মোট হার দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে, বাংলাদেশ শুল্ক বাড়ালে আমেরিকাও আরও বাড়াবে — হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যে নতুন করে ৩৫% শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ৫০%, আর বাংলাদেশ পাল্টা শুল্ক বাড়ালে আমেরিকাও আরও শুল্ক বাড়াবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশি পণ্য যদি যুক্তরাষ্ট্রেই উৎপাদিত হয়, তাহলে সেই শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

সোমবার (৭ জুলাই) স্থানীয় সময় এক চিঠিতে এই বার্তা জানান তিনি। ওই চিঠিটি পাঠানো হয় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।

ট্রাম্প জানান, মার্কিন পণ্যের ওপর বাংলাদেশ যে বাড়তি শুল্ক ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা বজায় রেখেছে, তার প্রতিক্রিয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চিঠিতে তিনি লেখেন, বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন করে, তাহলে কোনো শুল্কই থাকবে না এবং অনুমোদনের কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।

এর আগে গত ৯ এপ্রিল কার্যকর হওয়া ৩৭ শতাংশ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন ট্রাম্প। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে আবার ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা এলো।

শুধু বাংলাদেশ নয়, ট্রাম্প একই ধরনের চিঠি পাঠিয়েছেন আরও ১৪টি দেশের উদ্দেশে।

বাংলাদেশি পণ্যে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ। নতুন করে ৩৫ শতাংশ যোগ হওয়ায় এটি দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রই এই খাতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার।

রয়টার্স জানিয়েছে, বছরের শুরুতে ট্রাম্প যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, নতুন এই শুল্ক তারই একটি পরবর্তী ধাপ। নতুন শুল্ক কার্যকর হবে ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশি পণ্যে তখন অতিরিক্ত ৩৭% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এই অবস্থায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাম্পকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তিন মাসের জন্য শুল্ক স্থগিত রাখার অনুরোধ করেন। সেই সময় বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশ বাজেটে ৬২৬টি পণ্যে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ১১০টি পণ্যের শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়।

তবে ট্রাম্পের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তিনি চিঠিতে লিখেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, এবং দীর্ঘ সময়ের আলোচনায় এই বৈষম্য কমানো সম্ভব হয়নি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, “২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা বাংলাদেশের সব পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে। এই শুল্ক সব খাতভিত্তিক শুল্কের অতিরিক্ত হিসেবে ধরা হবে।”

এছাড়া ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠালেও এই উচ্চ শুল্ক এড়ানো যাবে না বলেও জানানো হয়।

চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, “বাংলাদেশ যদি কোনোভাবে শুল্ক বাড়ায়, তাহলে আমাদের আরোপিত ৩৫ শতাংশের ওপর সেই পরিমাণ বাড়তি শুল্কও যুক্ত হবে।”

যেসব দেশ ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির আওতায় পড়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে:

লাওস – ৪০%

মিয়ানমার – ৪০%

থাইল্যান্ড – ৩৬%

কম্বোডিয়া – ৩৬%

বাংলাদেশ – ৩৫%

সার্বিয়া – ৩৫%

ইন্দোনেশিয়া – ৩২%

দক্ষিণ আফ্রিকা – ৩০%

বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা – ৩০%

মালয়েশিয়া – ২৫%

তিউনিসিয়া – ২৫%

জাপান – ২৫%

দক্ষিণ কোরিয়া – ২৫%

কাজাখস্তান – ২৫%

বিবিসি জানিয়েছে, এই তালিকার বাইরে যুক্তরাষ্ট্র কেবল যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছে। ভারতও চুক্তির কাছাকাছি রয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, “আমরা যুক্তরাজ্য এবং চীনের সঙ্গে চুক্তি করেছি, আর ভারতের সঙ্গে চুক্তি প্রায় সম্পন্ন। তবে যেসব দেশের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি, তাদের কেবল একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।”

বাংলাদেশ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যার মধ্যে ৭৩৪ কোটি ডলারই ছিল তৈরি পোশাক খাত থেকে। ভিয়েতনাম ও ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে সক্ষম হয়, তাহলে বাংলাদেশের পোশাকের দাম তুলনামূলকভাবে বাড়বে এবং প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *