
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তদন্ত ও বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি।
নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে চলা বিক্ষোভে যাঁরা সহিংসতা করেছেন এবং যাঁরা এসব সহিংসতার নির্দেশ দিয়েছেন—উভয় পক্ষকে সঠিকভাবে তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার কথা বলেছে সংস্থাটি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাউথ এশিয়া গত বুধবার তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা জানিয়েছে।
বিবৃতির আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি একটি অডিও রেকর্ডিং প্রকাশ করে, যা তারা যাচাই করেছে। ‘বিবিসি আই’ নামের একটি ইউনিট জানায়, শেখ হাসিনা গত বছরের জুলাইয়ে এক বিক্ষোভের সময় প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছিলেন।
ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে শেখ হাসিনাকে একজন অজ্ঞাত সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনে দেখা যায়, যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন।
বিবিসির এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই অ্যামনেস্টি তাদের বিবৃতি দেয়। তারা জানায়, বিবিসির যাচাই করা রেকর্ডিংয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন।
এ প্রেক্ষিতে সংস্থাটি আবারও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, সহিংসতার পেছনে যাঁরা ছিলেন—তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
জাতিসংঘের এক তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ পায়। সেখানে বলা হয়, ২০২৪ সালের ওই আন্দোলনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, নিহতদের অনেকেই মিলিটারি রাইফেল ও শটগান থেকে ছোড়া ধাতব গুলির আঘাতে মারা যান। এসব অস্ত্র সাধারণত বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে।
এছাড়া, হাজার হাজার মানুষ গুরুতর আহত হন, যাঁদের অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেন।
অ্যামনেস্টি বলেছে, এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতায় যুক্ত ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে, আইনি প্রক্রিয়ার সব ধাপ মেনে চলতে হবে এবং কোথাও যেন মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া হয়—তা নিশ্চিত করা জরুরি।
সেইসঙ্গে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে যা কিছু ঘটেছে, তা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।
তারা মনে করে, রোম স্ট্যাটিউটের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটি সম্ভব। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনেও একই সুপারিশ রয়েছে।
রোম স্ট্যাটিউট ১৯৯৮ সালের ১৭ জুলাই ইতালির রোমে গৃহীত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। এটি আইসিসি গঠনের ভিত্তি, যা যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও আগ্রাসনের বিচার করে।
বিবিসি আইয়ের যাচাই করা রেকর্ডিং অনুযায়ী, শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘তাঁরা (বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাঁদের (আন্দোলনকারী) পাবেন, গুলি করবেন।’
একটি সূত্র, যারা ফাঁস হওয়া অডিওটির বিষয়ে জানে, বিবিসিকে জানিয়েছে—১৮ জুলাই, শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এই ফোনালাপ করেন।