বাংলাদেশের কার কত কর? ব্যবসায় লোকসানে থাকলেও ছাড় নেই এবার!

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

নতুন বাজেটে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লাভে থাকুক বা লোকসানে—সবক্ষেত্রেই কর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।

প্রস্তাবিত অর্থবিল অনুযায়ী, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার ট্যাক্স বা লেনদেন কর বর্তমান ০.৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লেনদেন কর বলতে বোঝানো হচ্ছে—প্রতিষ্ঠান যদি পণ্য বা সেবা বিক্রি করে ১০০ টাকা আয় করে, তাহলে তা থেকে সরকার ১ টাকা কর নেবে, তা সে প্রতিষ্ঠান লাভ করুক বা না করুক।

অনেকে ভাবতে পারেন ১০০ টাকায় ১ টাকা কর তেমন কিছু নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই করটি মূসক (ভ্যাট) বা অন্য কোনো কর ছাড়াও আলাদাভাবে আয়করের অন্তর্ভুক্ত। ফলে বছর শেষে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান লোকসানেও থাকে, তবুও এই কর পরিশোধ করতে হবে। যদিও পরবর্তী অর্থবছরে এই কর সমন্বয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।

ধরে নেওয়া যাক, কোনো কোম্পানি ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তার বিক্রির ওপর লেনদেন কর দিতে হবে ১ কোটি টাকা। কিন্তু যদি দেখা যায় কোম্পানিটি বছর শেষে ১০ কোটি টাকা লোকসানে গেছে, তাহলে করপোরেট করের আওতায় না পড়লেও, সরকার এই ১ কোটি টাকা লেনদেন কর বাবদ নিয়ে নেবে। যদিও এটিকে লেনদেন কর বলা হলেও এর প্রকৃত রূপ করপোরেট করই।

এ ধরনের করব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। যেসব কোম্পানি প্রচুর মুনাফা করে, তাদের জন্য এই কর তুলনামূলকভাবে সমস্যা তৈরি করে না, কারণ বছর শেষে তারা অধিক পরিমাণে আয়কর দেয়। ফলে তাদের জন্য লেনদেন কর তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব বহন করে।

বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই এই লেনদেন কর চালু রয়েছে, যার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানিয়ে আসছেন। বিশেষত টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিগুলো এই কর কমানো বা পুরোপুরি তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে এসেছে। এবারের বাজেটে এই খাতের কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৫ শতাংশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, তামাক ও তামাকজাত পণ্য এবং কোমল পানীয় উৎপাদকদের ওপর আগের মতো ৩ শতাংশ কর বহাল রাখা হয়েছে। তবে অন্য সকল খাতে, যেগুলো আগে করের আওতায় ছিল না, তাদের ওপর ১ শতাংশ হারে কর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি, সাধারণ কোম্পানির জন্য করপোরেট কর ধরা হয়েছে ২৭.৫ শতাংশ (যদি ব্যাংক লেনদেন নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকে তবে ২৫ শতাংশ)।

অর্থবিলে আরও বলা হয়েছে, তামাক, টেলিযোগাযোগ ও পানীয় কোম্পানির বাইরে নতুন বিনিয়োগে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে প্রথম তিন বছর লেনদেন কর মাত্র ০.১ শতাংশ ধার্য হবে।

কর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া জানিয়েছেন, ১ শতাংশ লেনদেন কর লোকসানে থাকা কিংবা লাভ–লোকসান প্রায় সমান এমন কোম্পানিগুলোর জন্য বড় চাপ তৈরি করবে। ফলে তাদের অনেক সময় মূলধন থেকেই কর পরিশোধ করতে হতে পারে, যা কর ফাঁকির প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেসব প্রতিষ্ঠান যারা নিয়ম মেনে কর দেয়।

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিপর্যায়েও এই করের বোঝা বেড়েছে। যেখানে পূর্বে ০.২৫ শতাংশ ছিল, এখন তা বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।

করপোরেট করের নতুন কাঠামো

অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হবে ২৭.৫ শতাংশ। তবে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকা এবং বছরে মোট ৩৬ লাখ টাকার অধিক লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সম্পন্ন করে, তাহলে তাদের কর হার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এই হার ২০২৬–২৭ এবং ২০২৭–২৮ অর্থবছরেও একই থাকবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে কর হার নির্ধারিত হয়েছে ২২.৫ শতাংশ। তবে যদি তারা নির্দিষ্ট সীমার বাইরে সব লেনদেন ব্যাংকিং মাধ্যমে করে, তাহলে কর হার ২০ শতাংশে নামবে। এই সুযোগ ভবিষ্যত দুই করবর্ষেও বহাল থাকবে, তবে ব্যাংক চ্যানেলেই সব লেনদেন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *