মুরাদনগরে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যা: তিন দিনেও মামলা হয়নি, আটকও নেই

কুমিল্লার মুরাদনগরে দুই যুবককে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিন দিন পেরিয়ে গেলেও থানায় কোনো মামলা হয়নি এবং পুলিশ এখনো কাউকে আটক করেনি।

নিউ ঢাকা টাইমস : ডেক্স রিপোর্ট

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামে দুই যুবককে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও থানায় কোনো মামলা হয়নি এবং পুলিশ এখনো কাউকে আটক করেনি।

পুলিশ জানায়, নিহতদের বিরুদ্ধে চুরি বা ডাকাতির কোনো মামলা রয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, “ঘটনার পর থেকে স্থানীয়রা বলছেন, নিহতদের বিরুদ্ধে একাধিক চুরি-ডাকাতির মামলা রয়েছে। তবে আমরা এখনো তা নিশ্চিত হতে পারিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ঘটনার দিন হতাহতরা চুরি বা ডাকাতির চেষ্টা করেছেন—এমন কোনো প্রমাণও আমরা পাইনি। আতঙ্কে পুরুষরা কেন গ্রাম ছাড়ছে, সে বিষয়ে আমি জানি না। কারণ পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে অভিযান পরিচালনা করেনি। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শনিবার কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ওসি আরও জানান, নিহতদের পরিবার যদি মামলা না করে, তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন ধরে পালাসুতা ও কাজিয়াতল গ্রামে চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ ছিলেন। এর মধ্যে গত ১২ জানুয়ারি রাতে গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে—এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। তখন স্থানীয় মসজিদ ও মাহফিলের মাইক থেকেও ঘোষণা দেওয়া হয়। গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে সড়কে অবস্থান নেন।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে পালাসুতা গ্রামের নায়েব আলী ওরফে নাবু মিয়ার ঘরে তার মেয়ের জামাইসহ তিন যুবককে দেখে গ্রামবাসীর সন্দেহ হয়। পরে ‘ডাকাত, ডাকাত’ বলে তাদের গণপিটুনি দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই তিন যুবককে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। রাত দুইটার দিকে দু’জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

নিহতরা হলেন—দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ও নাবু মিয়ার জামাই নুরু মিয়া (২৮) এবং একই ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ইসমাইল হোসেন (২৭)।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত শাহজাহান মিয়া কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বাগমারা গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে। তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পাশের কেওট গ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে ধাওয়া খেয়ে তিনজন ওই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারা বলেন, গত কয়েকদিনের মধ্যে পালাসুতা গ্রামের প্রবাসী রিপন মিয়ার বাড়ি, কাজিয়াতল গ্রামের রহুল আমিনের বাড়িসহ একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে ওই এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর পালাসুতা গ্রামে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে মসজিদ ও ওয়াজ মাহফিল থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ডাকাত প্রতিরোধে লাঠিসোঁটা নিয়ে গ্রামের রাস্তায় অবস্থান করেন স্থানীয়রা।

এ সময় পাশের গ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে ধাওয়া খেয়ে তিন যুবক এক বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার খবরে ‘ডাকাত-ডাকাত’ বলে তাদের আটক করে গণপিটুনি দেয় লোকজন।

ওসি কামরুজ্জামান বলেন, “নিহতদের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।”


অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত শিরোনাম:

কালের কণ্ঠ: নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ পরিবারের

বাংলাদেশ প্রতিদিন: আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বর্বরতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *